ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকরিতে বয়স

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ৩০ এপ্রিল ২০২০

সরকারী চাকরিতে বয়স

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। যে কারণে প্রায়ই অনেক মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী সরকারী চাকরিতে ঢোকার সুুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। তৃতীয়-চতুথ শ্রেণীর পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরের। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর দায়িত্ব সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি)। সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম ইত্যাদি কম হয়নি। এর সপক্ষে প্রধান যুক্তি, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভয়াবহ সেশন জট, পিএসসির পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি ইত্যাদি। অবসরের কারণে প্রচুরসংখ্যক পদ বছরের পর বছর ধরে শূন্যও রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে। সর্বোপরি সাম্প্রতিক করোনা মহামারী সঙ্কট এতে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। করোনা সংক্রমণের কারণে ২৬ মার্চ থেকে একটানা ছুটি থাকায়, পরিস্থিতি সাপেক্ষে যা আরও বাড়তে পারে আগামীতে, অনেক জরুরী গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি অথবা স্থগিত রয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এতে সেশন জট বাড়বে নিঃসন্দেহে। সার্বিক পরিস্থিতি মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনায় সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শিথিল করার কথা ভাবছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা ইতিবাচক অবশ্যই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারী ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর অনুপাতে ভারসাম্য বিরাজ করছে। তবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ বললেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। তবে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই তরুণ ও কর্মক্ষম বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষমÑ মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। এতে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য দশ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি নতুনকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সবিশেষ জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ শিল্পায়নের ওপর।
×