ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আশার বাণী!

প্রকাশিত: ০০:৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২০

আশার বাণী!

সারা বিশ্ব যখন চরম দুঃসময় ও দুঃসংবাদের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করছে, তখন অন্তত একটি সুসংবাদ দিয়েছে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এ্যান্ড ডিজাইনের ডাটা ড্রাইভেন ইনোভেশন ল্যাবের গবেষকরা। করোনা মহামারীতে আক্রান্ত বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। বলাবাহুল্য, এটি নিতান্তই একটা একাডেমিক গবেষণা, যেটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আহরিত তথ্য-পরিসংখানের ভিত্তিতে প্রস্তুত। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আসন্ন মে মাসের মধ্যে কমে আসবে ৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশে এই ভাইরাসটি ৩০ মের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে ৯৯ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ থেকে ভাইরাসটির পুরোপুরি বিলুপ্ত হতে সময় লাগতে পারে আগামী বছরের ১৫ জুলাই নাগাদ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে-এর সংক্রমণ কমে যাবে ৯৭ শতাংশ ২১ মের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে একই পরিমাণ আক্রান্ত কমবে ১১ মের মধ্যে আর ইতালিতে ৭ মের মধ্যে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এর প্রকোপ অনেকাংশে কমে যাবে। উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৩১টি দেশের করোনাবিষয়ক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এই গবেষণা। তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে দিয়ে এও বলেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-পরিসংখ্যান এবং করোনাভাইরাসটির জীবনচক্রের মেয়াদ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের ভিত্তিতেই তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তাই বলে এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম, নিয়ম শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ লকডাউন, শাটডাউনের মতো পরিস্থিতি একেবারে বর্জন বা উপেক্ষা করা যাবে না। গবেষণার সুফল যে সবসময় পাওয়া যাবে, এমন কোন কথা নেই। তবে বিশ্ব যখন চরম এক সঙ্কট ও ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করছে, তখন যে কোন আশা ও আশ্বাসের বাণীই সমুদ্রে ভাসমান অসহায় মানুষের কাছে খড়-কুটো আঁকড়ে ধরার মতো মনে হয়। রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বাংলাদেশেও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে শিথিল করা হচ্ছে। পোশাকসহ শিল্পকারখানাগুলো খুলেছে। দোকানপাট, হোটেল-রেস্তরাঁ, ব্যবসা-বাণিজ্য খোলার প্রক্রিয়া চলছে। তাই বলে কোথাও শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। সর্বত্র আমরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি যথাযথভাবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা যুদ্ধ করার জন্য বিশ্বের কোন দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি করোনার আঁতুরঘর বলে খ্যাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানও নয়। করোনাভাইরাস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডমিটারের সর্বশেষ তালিকানুযায়ী করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে ইতালি, চীন, ইরান, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। বলতেই হবে, অধিকাংশই ধনী ও সচ্ছল দেশ, বাংলাদেশের তুলনায় তো বটেই। এসব দেশেও এমনকি প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা পোশাকসহ চিকিৎসা সামগ্রীর গুরুতর ঘাটতি ও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সে অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি যথাযথ ও ব্যাপক হবে, এমনটি ভাবাও বাতুলতা। তবু সরকার তার সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতা নিয়ে যথাসাধ্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এ কথা স্বীকার করতে হবে। আর সব কিছু সরকার সব সময় করে দেবে এমনটি ভাবাও ঠিক নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও প্রত্যেকেরই সবসময় কিছু দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে অবশ্যই। এখন সময় এসেছে নাগরিক দায়িত্ব পালনে। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবেÑ ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। জরুরী প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বেরনোই ভাল। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে প্রতিকূল পরিস্থিতির।
×