ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালি প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রোম দূতাবাস

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৯ এপ্রিল ২০২০

ইতালি প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রোম দূতাবাস

ফিরোজ মান্না ॥ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক সমস্যায় থাকা ইতালি প্রবাসীদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। বিভিন্ন দেশের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেয়া ৮ কোটি টাকার মধ্য থেকে ইতালিতে ২৫ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের ওই টাকা দিয়ে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের দূতাবাসের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে ই-মেল ঠিকানা দেয়া হয়েছে। ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করলেই খাদ্য সহযোগিতা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে ইতালির মতো অন্তত ১৫টি দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সারা দুনিয়ায় ১৯ লাখের বেশি কর্মী রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ১৫টি দেশে দূতাবাস ও হাইকমিশন বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাকি দেশগুলোতেও বিভিন্নভাবে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে বন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ কর্মী। তাদের কাজ না থাকায় ঘরবন্দী রয়েছেন। অনেক কর্মী রয়েছে যাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের জরুরী ভিত্তিতে খাবার দিতে না পারলে পরিস্থিতি জটিল হবে। করোনা ভয়ের চেয়ে এখন তাদের খাবার পাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের এক কোটি ১৯ লাখের বেশি কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ কর্মী আয়ের সব টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল করোনা পরিস্থিতির আগে। করোনা এক এক করে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশগুলো লকডাইনে চলে যায়। তখন কর্মীরা ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। তাদের হাতে যা টাকা পয়সা ছিল তা দিয়ে যতটুকু খাবার কিনতে পেরেছিল তাই দিয়ে এতদিন চলেছে। এখন আর কর্মীদের অনেকের চলার মতো কোন টাকা নেই। ফলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে দুই দফায় ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এই টাকার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। শুধু ইতালিই নয় এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশে কর্মীদের পাশে দাঁড়িছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশে কর্মীরা চরম দুর্ভোগে আছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে কোন কর্মীকে চাকরি হারাতে না হয়। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রয়েছে। বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধও করবে। এছাড়া যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। তারা যাতে পুনরায় যেতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। মানবিক বিবেচনায় কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিদেশে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ বাংলাদেশী রয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখের মতো কর্মী করোনাভাইরাসের প্রভাবে নানা সঙ্কটে পড়েছেন। বিশেষ করে খাদ্য সঙ্কটই বেশি। বিভিন্ন দূতাবাস বাংলাদেশী কর্মীদের তালিকাও করা হয়েছে। তাদের খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, গোটা ইতালি এখন লকডাউন থাকায় সরাসরি কেউ দূতাবাসে যেতে পারছেন না। দূতাবাস ঘোষিত জোনভিত্তিক দোকান থেকে প্রবাসীরা নামের তালিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন বলে দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি দূতাবাসের একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তাতে বলা হয়, যে সব প্রবাসীরা করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক অসুবিধায় আছেন তারা দূতাবাসের ই-মেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সহযোগিতা নিতে পারবেন। পরে বাংলাদেশীরা দূতাবাস ই-মেল পাঠাতে থাকেন। তাদের কাছে মোট ১৮শ’ ই-মেল পেয়েছেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃতপক্ষে যাদের খারাপ অবস্থা এমন ৬শ’ জনকে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। আরও সহযোগিতা দেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
×