ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৯ এপ্রিল ২০২০

করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে

নিখিল মানখিন ॥ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে নতুন করে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা। নমুনার সংখ্যা যতই বাড়ানো হচ্ছে, রোগী শনাক্তের হারও প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরও আটজনের মৃত্যু এবং নতুন করে ৬৪১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৪৯৬৮ নমুনা পরীক্ষা করে এই ফল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬৭ এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১০৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ১১ জনসহ এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন। আরও দু’টি জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত জেলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২। ঢাকা সিটির করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ পর্যায়ের দিকে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্ত ৬৪১ জনের মধ্যে ৪১৬ জনই ঢাকা সিটির। আর করোনায় মারা যাওয়া ১৬৭ জনের মধ্যে ১৩৮ জনই ঢাকা বিভাগের। এখন দেশের মাত্র দুটি জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ চতুর্থ ধাপের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ ধাপটি হলো ‘মহামারী’। এই ধাপে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়। বাহক ও আক্রান্তের নির্দিষ্ট হিসাব রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায় ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করেছে, যা মহামারী ধাপের পূর্ব মুহূর্ত। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শেষ পর্যায়ে এসে দৈনিক করোনা টেস্ট করার সক্ষমতা বর্তমান অবস্থার চেয়ে অনেক গুণ বাড়ানো না হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে না। পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া না গেলে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও সঠিক পথে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করবে, যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। নমুনা সংখ্যা ও রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড ॥ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরও আটজনের মৃত্যু এবং নতুন করে ৬৪১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৪৯৬৮ নমুনা পরীক্ষা করে এই ফল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬৭ এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১০৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ১১ জনসহ এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে আগের দিনের কিছু নমুনাসহ মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে চার হাজার ৯৬৮টি, যা আগের দিনের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৭০১টি। গত ২৪ ঘণ্টায় যে আটজন মারা গেছেন তাদের বিষয়ে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে ছয়জন পুরুষ এবং দুইজন নারী। অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করলে ছয়জন ঢাকার ভেতরে, দুইজন ঢাকার বাইরে। বয়সের ভিত্তিতে বিচার করলে চারজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুইজন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৬৩ জনের মধ্যে বেশি রোগী ঢাকা বিভাগের। এই বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিমানবন্দরসমূহে ৩৩১ জন, স্থলবন্দরসমূহে ৬১ জন এবং সমুদ্রবন্দরসমূহে ২৬৫ জন বিদেশফেরতকে স্ক্রীনিং করানো হয়েছে। এ পর্যন্ত বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে এবং ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে প্রবেশ করা মোট ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩৯ জন বিদেশফেরতকে স্ক্রীনিং করানো হয়েছে। সাড়ে তিন লাখ পিপিই মজুদ রয়েছে Ñ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ১২টি পিপিই এবং বিতরণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৮টি। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৪টি পিপিই। করোনা সংক্রান্ত কলের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরে ৫১ হাজার ১৫৯টি, ৩৩৩ নম্বরে ২১ হাজার ২৬৬টি এবং আইইডিসিআর’র নম্বরে ২৬৯০টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কল এসেছে ৭২ হাজার ১৮৭টি। এ পর্যন্ত হটলাইনগুলোতে করোনা সংক্রান্ত মোট কল এসেছে ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৯১টি। নতুন ২টিসহ ৬২ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত Ñ মিডিয়া সেল ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেল জানায়, দেশের আরও দুটি জেলা সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশের ৬২ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নতুন ৪১৬ জন বেড়ে দাঁড়াল ৩৪ জনে, যা দেশের মোট আক্রান্তের ৫৪.৭৩ শতাংশ এবং সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় নতুন ৬৫ জন বেড়ে রোগী সংখ্যা হয়েছে ১৯১৫ জন, যা মোট আক্রান্তের ৩০.৬২ শতাংশ।
×