ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিবি’র নির্দেশনা মানছে না চট্টগ্রামে বিভিন্ন সিডিউল ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৩০ এপ্রিল ২০২০

বিবি’র নির্দেশনা মানছে না চট্টগ্রামে বিভিন্ন সিডিউল ব্যাংক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) নির্দেশনা মানছে না বেশকিছু সিডিউল ব্যাংক। বিবি’র পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ও সংক্রমণ কমাতে সিডিউল ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে সপ্তাহের কার্যদিবসে প্রতিদিন দুইঘণ্টা খোলা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। গত রবিবার থেকে তা প্রতিদিন চারঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বেশকিছু সিডিউল ব্যাংক একদিকে ব্যাংক খোলায় রেশনিং করছে অন্যদিকে করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যাংকের বাইরে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করছে গ্রাহকদের। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংক সেবা দিতে গিয়ে কিছু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রেশনিং করতে গিয়ে এলাকাভেদে সপ্তাহে মাত্র দুদিন ব্যাংক খোলা রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্যিক এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলোতে আমদানি-রফতানি খাতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা দূরীকরণে বাণিজ্যিক এলাকার ব্যাংকগুলোর লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন। সিডিউল ব্যাংকগুলোতে লেনদেনের সময়সীমা ও পরিধি বাড়ানোর নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) দিলেও সাধারণ ভোক্তাদের আর্থিক লেনদেনে জড়িত ব্যাংকগুলোর সীমিত ব্যাংকিং পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি পালাক্রমে দায়িত্বপালন ও রেশনিং ব্যাংকিং এর কারণে সাধারণ জনগণের ব্যাংকিং লেনদেন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, সিডিউল ব্যাংকগুলোর সঞ্চয়ী হিসাবের গ্রাহকরা ও চলতি হিসাবের গ্রাহকরা ব্যাংকিং লেনদেনে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। তবে ব্যাংকের রেশনিংয়ের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অগ্রণী ব্যাংকের শাখার সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন গ্রাহকদের। করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে গ্রাহকের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। জিউসি এলাকায় ওয়ান ব্যাংকের শাখায় দেখা গেছে একই চিত্র। নিরাপত্তাকর্মীরা হ্যান্ড স্যানেটাইজার ও ব্লিসিং মিশ্রিত পানি দিয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা করলেও গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে দীর্ঘ লাইন ও রমজানের কারণে। এদিকে এক্সিম ব্যাংক রবি থেকে বৃহস্পতি পর্যন্ত প্রতিদিন খোলা রাখায় গ্রাহক ভোগান্তি ছিল না। চট্টগ্রামের বাণিজ্যপাড়া খ্যাত খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদে গ্রাহকদের ভোগান্তি ছিল চরমে। কারণ ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকরা একই লাইনে দাঁড়ানোর কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক বহদ্দারহাট, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও জিইসি শাখা সপ্তাহে মাত্র দুদিন খোলার কারণে লেনদেন সামাল দিতে পারছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আরও অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সীমিত ব্যাংকিং, পালাক্রমে দায়িত্বপালন ও রেশনিং করে ব্যাংক খোলা রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে স্ব স্ব ব্যাংক মালিকদের পরিচালকপর্ষদ। এদিকে, স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হলে সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালন সম্ভব হবে বলে মনে করছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেনে প্রতিবন্ধকতা ও সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালনে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে করণীয় নিয়ে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক একটি এলাকায় মাত্র দুদিন সেবা দিচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এবি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক। তবে সরকারী ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই খোলা রেখে গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে। ক্যাব চট্টগ্রামের এর পক্ষ আরও জানা গেছে, ব্যাংকের সীমিত কার্যক্রমের কারণে বিভিন্ন পেনশন স্কিম, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা তাদের লভ্যাংশ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে জীবন-জীবিকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সরকারী-বেসরকারী খাতের করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় ত্রাণ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
×