ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাকে চেপে ঢাকা যাচ্ছে শত শত নিন্ম আয়ের মানুষ ও গামের্ন্টস কর্মীরা

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৯ এপ্রিল ২০২০

ট্রাকে চেপে ঢাকা যাচ্ছে শত শত নিন্ম আয়ের মানুষ ও গামের্ন্টস কর্মীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ ট্রাকের ডালায় উঠে ত্রিপলে ঢেকে রশিদিয়ে বেঁধে মানুষকে ডেকে ফেলে অভিনব পদ্ধতিতে লালমনিরহাট জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলা গুলো হতে নিম্ন আয়ের মানুষ ও গামের্ন্টস কর্মীরা দলে দলে লক ডাউনের মধ্যে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে ফিরছে। গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়ায় এভাবে শ্রমিকরা কাজে যোগদিতে ছুঁটছেন। গণ-পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা যে যেভাবে পারছে ঢাকায় যাচ্ছে। এতে করে করোনা সংক্রামণ ঝুঁকি বেড়ে গেছে। আজ বুধবার জেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে ট্রাকের ডালার ভেতরে ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ উঠে বসেছে। ট্রাকের ডালার ওপর ত্রিপল ( কাপড়ের কাভার) দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ট্রাকে পণ্য বোঝাই করার পর যেভাবে শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়ে। সেভাবে ট্রাকের ডালা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে বুঝার উপায় নেই। ভিতরে মানুষ আছে। মনে হবে পাথর বোঝাই বা পণ্য বোঝাই ট্রাক। এভাবেই লালমনিরহাট জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলা গুলেঅ থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢাকায় যাচ্ছে। ট্রাকে করে ঢাকায় যাওয়া বেশিরভাগই গার্মেন্টস শ্রমিক। তারা গাজীপুর, চন্দ্রা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোষাক কারখানায় কাজে যোগ দিতে যাচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের সাথে রয়েছে নিম্ম আয়ের মানুষ ও কৃষিশ্রমিকও। লালমনিরহাট জেলার গ্রামে বিশেষ করে চরাঞ্চলের শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত যুবক ও তরুণীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গামের্ন্টসে শ্রমিকসহ নানা টেকনিক্যাল পদে কাজ করে। গামের্ন্টস কারখানা খুলে দেয়ায় তারা কাজে যোগদিতে ট্রাকে চেপে যাচ্ছে। কারণ করোনা সংক্রামণরোধে গণপরিবহণ ও দূর পাল্লার যানবাহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লকডাউন চলবে। এদিকে ২২ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছে যে, বুড়িমারী স্থল বন্দর খোলা থাকবে। বুড়িমারী স্থল বন্দর খোলা থাকার কারণে। প্রতিদিন শতশত পাথর বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন অঞ্চল হতে খালি ট্রাক আসছে। গামের্ন্টস শ্রমিকরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খালি ট্রাক ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের মাধ্যমে ভাড়া করছে। পাথরের চেয়ে মানুষ পরিবহনে ট্রাক চালকরা ভাড়াও একটু বেশি পাচ্ছে। তাই পণ্য বোঝাই ট্রাকের মত করে মানুষকে বোঝাই করে ত্রিপল( কাপড়ের কভার) দিয়ে ঢেকে রশিদিয়ে বেঁধে মানুষ কে পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে। মহিষখোচা বাজারের গামের্ন্টস কর্মী রুমানা(২১) জানান, স্যার এটাতো সরকারি চাকুরি না। গামের্ন্টসের কাজ। শ্রমিকের কাজ। উৎপাদন ঠিক রাখতে মালিক যাকে পারে তাকে কাজে নিবে। আমি যেতে না পারলে কাজ হারিয়ে ফেলব। বহুকষ্টে সুন্দর পরিবেশের একটি গামের্ন্টসে কাজ পেয়েছি। এই কাজ হারাতে চাইনা। তাছাড়া গ্রামে পড়ে থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। পরিবারের অন্যরা খেতে পারে না। আমি কী খাব। লালমনিরহাট ট্রাক শাখার জনৈক শ্রমিক বললেন, মামা কয়েক দিন ধরে কোন আয় রেজগার নেই। কেউ তো খাদ্য সহায়তা আমাকে দেয়নি। তাই একটি ট্রাক ম্যানেজ করে দিলাম। জনপ্রতি ১২শ টাকা টাকায় ঢাকা নিয়ে যাবে। বেশির ভাগ কর্মী ঢাকার গাজীপুরে নামবে। এখান হতে কিছু টাকা দালালি বাবদ পাব। তাই নিয়ে সংসার চলবে। এই দালালির টাকা আবার কিছু শ্রমিক সংগঠনকে চালানের মাধ্যমে দিতে হবে। কয়েক জন কে ভাগ দিতে হবে। ট্রাকচালক আব্দুর রমজান(৪২) জানান, খবি কষ্টে আছি। বুড়িমারী স্থলবন্দর খুলেছে। এই কারণে মাল নিতে পাটগ্রামের বুড়িমারী বন্দরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মানুষ পরিবহনের ভাড়া পেয়ে গেলাম। এটকু বেশি ভাড়ার আশায় লোক গুলোকে তুলাম। তাছাড়া এই লেঅক গুলো কাজে যাবে। কিভাবে যাবে। উপকার করছি যা। ট্রাকে করে মানুষ নিয়ে গেলে পুলিশ ট্রাক আটকাবে না? পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে বসিয়ে ট্রাকের ওপর এিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। রশিদিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক যেমন করে বাঁধে সেভাবে বাধা হয়েছে। তারপরেও ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হবে।
×