ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি বাঁচাতে দল বেঁধে ছুটছেন পোশাক শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২৯ এপ্রিল ২০২০

চাকরি বাঁচাতে দল বেঁধে ছুটছেন পোশাক শ্রমিকরা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে ২/৩ দিন ধরে গাজীপুরসহ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে হাজার হাজার শ্রমিক। মালিকপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার খবর পেয়ে এসব শ্রমিক লকডাউন উপেক্ষা করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ছুটছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিক চাকরি বাঁচাতে কখনও হেঁটে, কখনও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সাভ্যান বা পিকআপে চড়ে রাজধানী ও গাজীপুর আসছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথমদিকেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় এসব শ্রমিক গাজীপুর ও রাজধানী ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। কারখানা খোলার খবরে তারা এখন আবার ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারও গাজীপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও পয়েন্টে বাড়ি থেকে ফিরে আসা অনেক শ্রমিককে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার আবুল হাশেম ঢাকার এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। মঙ্গলবার বিকেলে তার সঙ্গে কথা হয় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তিনি জানান, কাজে যোগ দেয়ার জন্য মলিকপক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে কারখানা খোলার খবর পেয়ে ভোরে সেহেরি খেয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। ঢাকা যত দূরই হোক না কেন, চাকরি বাঁচাতে হলে কর্মস্থলে যেতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কখনও হেঁটে, আবার কখনও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা ভ্যান বা পিকআপে চড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। কিন্তু কখন পৌঁছাবো জানি না। একই কথা জানালেন সিরাজগঞ্জ সদরের আলমগীর হোসেন ও সুরাইয়াসহ আরও কয়েক গার্মেন্টস কর্মী। তবে তারা জানেন না তাদের কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েছে কি-না। তারা শুধু মালিকপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে চাকরি বাঁচাতে ছুটে চলেছেন। ময়মনসিংহের ফুলপুরের বড়পুটিয়া এলাকার লাল মিয়া গাজীপুর মহানগরীর নলজানী এলাকার ওডেসা গার্মেন্টসের কর্মী। তিনি বলেন, অফিস থেকে তাকে ফোন দিয়ে কাজে যোগদান করতে বলেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী তিনি ভোর সাড়ে ছয়টায় বাড়ি থেকে রওনা হন। কোথাও তিনি যাত্রীবাহী বাসের দেখা পাননি। কখনও অটোরিক্সা, কখনও সিএনজি অটোরিক্সা আবার কখনও হেঁটে বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছান। শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার শ্রমিক হালিমা আক্তার জানান, কারখানা খুলে গেছে তাই যাচ্ছি। মঙ্গলবার কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পাইছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই স্বামী সন্তানসহ গাজীপুরে যাচ্ছি। গাজীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার মেঘনা নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) ইকবাল হোসেন জানান, বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার নির্দেশনা নাই। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়ে এ কারখানাসহ জেলার বেশকিছু বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ কারখানায় তিন সহ¯্রাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় শ্রমিকদের তাদের অবস্থান ত্যাগ না করে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল।
×