ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী ভিত্তিতে যেসব কাজ চলছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে

প্রকাশিত: ২২:২২, ২৯ এপ্রিল ২০২০

জরুরী ভিত্তিতে যেসব কাজ চলছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে

তপন বিশ্বাস ॥ ২৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সরগরম দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সরগরম খাদ্য মন্ত্রণালয়ও। চলছে টানা ৪১ দিনের ছুটি। পাশাপাশি শুরু হয়েছে রমজান। কিন্তু জাতীয় এই দুর্যোগে থেমে থাকলে চলবে না। দেশের জনগণের দেখভাল করতে এরই মধ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জরুরী সেবা প্রদানকারী কয়েকটি মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কিউআর কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত করে মঙ্গলবার তা সকল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৩ মে’র মধ্যে এটি ডাটা এন্ট্রি করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকে কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ এবং সরকারী সহযোগিতা প্রদান করা হবে। কিউআর কার্ডের মাধ্যমে এই সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রতিটি জেলার সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ইতোপূর্বে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে সকল জেলা প্রশাসককে কিউআর কার্ড পাঠানো হচ্ছে। আগামী ৩ মে’র মধ্যে সকল জেলা প্রশাসক সুবিধাভোগীদের তালিকা ডাটাএট্রি করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এ ব্যাপারে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ্ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, কিউআর কার্ডের মাধ্যমে প্রায় সোয়া এক কোটি পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হবে। তিনি বলেন, কোন জেলায় কত কার্ড যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয় তার সমন্বয় করছে। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেশের ৫ কোটি মানুষকে সহায়তা দেব। এই লক্ষ্যে বিশেষ ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু হবে। এছাড়া ভিজিএফের মাধ্যমেও সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি ফিশারিজ ও রিলিফতো রয়েছেই। তিনি বলেন, বিশেষ ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় সুবিধা পাবে ৬২ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় সুবিধা পাবে ৫০ লাখ পরিবার। এরা ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ২০ কেজি করে চাল পাবেন। এছাড়া ভিজিএফের আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবার সরকারী সুবিধা পাবেন। বাকি ৩২ লাখ ১০ হাজার পরিবার ফিশারিজ ও রিলিফ সুবিধার আওতায় রয়েছে। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বসে তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠক সম্পন্ন হয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ সময় এফএও, বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের অধীন বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার, পিআইডি, ডিএফপি, মাস কমিউনিকেশনের কার্যক্রম মনিটরিং করে। বিশেষ করে তাদের জনসচেতনতামূলক কর্মকা- যথাযথভাবে হচ্ছে কি না তা তদারকি করে মন্ত্রণালয়টি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রুটিন কাজের বাইরে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, রবিবার মন্ত্রণালয়ে কাজ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ না থাকায় মন্ত্রণালয়টি বন্ধ ছিল। আজ বুধবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এই বৈঠকে মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। গত ২৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়, সাধারণ ছুটির সময়ে সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এই আদেশ জারির পর ওই দিনই আবার তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। প্রত্যাহার করে বলা হয় জরুরী সেবা দানকারী মন্ত্রণালয়গুলো খোলা থাকবে। এছাড়া ছুটির আওতামুক্ত থাকবে বেশ কিছু খাত। ছুটির আওতার বাইরে থাকা খাতগুলো হলো- জরুরী পরিষেবা যেমন-বিদ্যুত, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্র বন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ ছুটির বাইরে থাকবেন। সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরী সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জমাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) কর্মীরা এ ছুটির আওতাবর্হিভূত থাকবেন। ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সকল কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও গণপরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে। ছুটিকালীন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। জরুরী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ খোলা থাকবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। ছুটি ফের বাড়ায় করোনার কারণে দেশে টানা ৪১ দিন ছুটি থাকবে।
×