ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়ের ৬২ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৯ এপ্রিল ২০২০

হাওড়ের ৬২ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে দেশের হাওড় অঞ্চলের ৬২ শতাংশ ধান কৃষকরা কেটে ইতোমধ্যে ঘরে তুলেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। হাওড় এলাকায় আধুনিক ধান কাটার মেশিন সরবরাহ করার কারণে এবং করোনার এই সময়েও বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনায় দ্রুতই ধান কাটার চেষ্টা চলছে। কৃষিমন্ত্রীও জানিয়েছেন, শ্রমিকের পাশাপাশি হাওড় এলাকায় ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। ২৫ এপ্রিল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় হাওড়ের ৪৪% ধান কর্তনের কথা। দিন দিন ধান কাটা এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। মন্ত্রণালয় থেকে নানা উদ্যোগ বিশেষ করে শ্রমিক আর মেশিন সরবরাহ করার কারণে ধান কাটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। দ্রুত ধান কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার মেশিন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, আধুনিক কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন এক ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটতে সক্ষম। শুধু ধান কাটা নয়, সঙ্গে সঙ্গে এটি ধান মাড়াই করে বস্তাবন্দী করতেও সক্ষম। যেখানে ১০ জন শ্রমিক দরকার হয়, সময় লাগে অনেক বেশি খরচও বেশি হয়। আবার রিপার দিয়ে দেড় বিঘা জমির ধান কাটা যায় ঘণ্টায়। মেশিন দিয়ে যেমন দ্রুত ধান কাটা যায় তেমনি কৃষকের খরচ কম বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাওড়ের প্রায় ৬২ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। পাকা অবস্থায় (কাটা বাকি) রয়েছে ১৪ শতাংশ এবং এখনও ২৪ শতাংশ বোরো ধান পাকেনি। কৃষক ও শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বুধবার সুনামগঞ্জ সদরের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এবং তাহিরপুর উপজেলায় হাওড়ে কৃষকের বোরো ধান কাটা পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানানো হয়েছে। এর আগে, কৃষিমন্ত্রী ২১ এপ্রিল নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন এবং খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের হাওড়ে বোরো ধান কাটা পরিদর্শন করেন। সে সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ইতোমধ্যেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। করোনার কারণে খাদ্যসঙ্কটে পড়তে পারে পুরো বিশ্ব। দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষও। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের জোগান দেয় হাওড়াঞ্চলের বোরো ধান। হাওড়ে বছরে শুধু একটি ফসল হয়, সেটি হলো বোরো ধান। এই ফসল ফলাতে হাওড়ের কৃষকরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এবং সার, সেচ, বালাইনাশকসহ প্রভৃতিতে তার সর্বস্ব বিনিয়োগ করে। এ ফসল যদি নষ্ট হয়, সময়মতো ঘরে না তোলা যায় তাহলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাওড়ের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরী। আর এটি করতে পারলে বাংলাদেশের ধান উৎপাদনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একই সঙ্গে, নিশ্চিত করবে খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ প্রদানসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রমিকের পাশাপাশি হাওড় এলাকায় ধান কাটার জন্য ২৯৪টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ৪০৬টি রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অতি সম্প্রতি ৭০% ভর্তুকিতে জরুরী ভিত্তিতে প্রেরিত নতুন ১২৮টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার এবং ২৩টি রিপার। একই সঙ্গে, দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওড়ের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এলাকায় প্রায় তিন লাখ শ্রমিক ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত আছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস আদালত বন্ধ রেখেছে, সারাদেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এবং কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এড়াতে বেশির ভাগ মানুষ ঘরে থাকায় হাওড় অঞ্চলের ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয় এবার। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের ধান কাটতে হাওড় এলাকায় পাঠানো হয়। এদের রাতে থাকার জন্য ওইসব এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলে দেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাত জেলায় শুধু হাওড়ে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাটা হয়েছে ২ দশমিক ৭৪ লাখ হেক্টর জমির ধান, যা হাওড়ে মোট আবাদের ৬২ শতাংশ। সিলেটে ৬৫ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ৭২ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৫৫ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৬৫ শতাংশ, নেত্রকোনায় ৭৪ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭০ শতাংশ এবং কিশোরগঞ্জে ৪৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হওয়ার তথ্য জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ শতাংশ আসবে হাওড় অঞ্চল থেকে।
×