ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শপিংমল, মার্কেট কবে খুলবে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০২০

শপিংমল, মার্কেট কবে খুলবে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আগামী পহেলা মে থেকে দোকানপাট বিপণি বিতান ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া হবে কি না-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। এর আগে মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট সচিবরা। সভায় দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যেও মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দিতে চান ব্যবসায়ীরা। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। সূত্র মতে, করোনার মধ্যে যাতে রমজানে খাবারের কোন সঙ্কট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার খোলা রাখা হয়েছে। ঢাকার মৌলভী বাজার, শ্যামবাজার, কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্য দ্রুত আমদানি ও খালাসে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় যাতে শ্রমিকের কোন সঙ্কট না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, নিত্যপণ্যের মার্কেট খোলা রয়েছে ঠিক, কিন্তু এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে কাঁচাবাজারে গায়ে গায়ে ঘেঁষে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। এতে করে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। রোজাদারদের কেনাকাটা স্বাভাবিক করতে নগরীর দোকানপাটগুলো এখন বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইফতারসামগ্রী বেচাকেনা শুরু করেছে হোটেল রেস্তরাঁগুলো। এ অবস্থায় দোকানপাট, বিপণি বিতান ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আগামী পহেলা মে থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলে কাজ শুরু করতে চান। তবে ব্যবসায়ীদের এই দাবিটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। এদিকে, দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে সোমবার চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এবং মহাসচিব জহিরুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, গত মার্চ মাস থেকে সমগ্র বাংলাদেশের সব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকার কর্তৃক ছুটি ঘোষণা করা হলে আমরা সে অনুযায়ী বন্ধ রেখেছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা ক্ষুদ্র খুচরা ও পাইকারি দোকানিদের পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এদিকে দোকান-পাট বন্ধ থাকায় রোজগারের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এসব ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীরা অর্ধাহারে অনাহারে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন। তারা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এতদিন দোকানপাট বন্ধ থাকায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার পুঁজি নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় তাও বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এক আলোচনা সভায় গার্মেন্টস ও বৃহত্তর শিল্পসমূহ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খুলতে শুরু করেছে। শ্রমিকরাও দলে দলে আসতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে নরসিংদী জেলা প্রশাসক, জেলা চেম্বার ও বণিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দেশের বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট নরসিংদীর বাবুরহাট খুলে দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র, খুচরা ও পাইকারি মার্কেট ও দোকানসমূহ আগামী পহেলা মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রেখে আমাদের এ সব ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। জানা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রীকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়ার পর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে গার্মেন্টসসহ দেশের বিভিন্নখাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাদের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দীন ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মার্কেট, শপিংমল ও বিপণি বিতান খোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে যাবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের আবেদনের বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। আশা করছি, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে। এদিকে, লকডাউনের মধ্যে সুপারশপগুলো খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া কৃষিপণ্য পরিবহনে বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার এবং বিদেশে রফতানির জন্য কার্গো ভাড়ার বিষয়গুলো সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের বিষয়টিও ‘গুরুত্বসহকারে’ বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
×