নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৭ এপ্রিল ॥ জেলা সদরের উপশহর বত্রিশহাজারি তালুক খুটামারা বটতলায় দেহ ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় ছয় বছরের শিশু সন্তানের সামনে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে লম্পট স্বামী। গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার সময় ঘটনাস্থলে দুইজন কর্পোরেট কোম্পানি তরুণ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টায়। পুলিশ ওই লম্পট স্বামী চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক খোকনকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে। নিহতের পরিবার ও থানায় মামলার সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের উপশহর বত্রিশহাজারি তালুক খুটামারা (বটতলা) মহল্লার মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে (চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য) আব্দুর রাজ্জাক খোকন। প্রায় ৭ বছর আগে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে পাশের মহল্লার উত্তর খুটামারার মৃত আব্দুস সামাদের মেয়ে লাকী বেগমকে (২৫)। লাকী বেগম লালমনিরহাট আলনাহিয়ান শিশু পরিবারের (সরকারী এতিমখানা) বেড়ে ওঠে। সেখান হতে এসএসসি পাস করে। পরে মামার বাড়িতে থেকে এইচএসসি পাস করে।
গত ২২ এপ্রিল গভীররাতে স্বামী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক খোকন বাড়িতে দুইজন যুবককে নিয়ে যায়। তারা দু’জনেই কর্পোরেট কোম্পানির কর্মকর্তা। লম্পট স্বামী খোকন ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য স্ত্রী লাকী বেগমকে চাপ দেয়। এতে স্ত্রী রাজি না হলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে খোকন। এক পর্যায়ে স্ত্রী লাকী বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লে লম্পট স্বামী ভাবে স্ত্রী মারা গেছে। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কৌশলে ওই যুবকদ্বয় পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা তাদের দেখেছে। লম্পট খোকন ইতোপূর্বে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১৪ নারীকে বিয়ে করে। তার কোন স্ত্রী বর্তমানে নেই। স্ত্রীদের দিয়ে পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করাতে চাওয়া এবং নির্যাতনের কারণে ১৩ স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তবে খোকন ৫টি বিয়ের কথা স্বীকার করেছে।
অগ্নিদগ্ধ লাকীর আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে রেফার করে। লম্পট স্বামী ও তার স্বজনরা করোনাভাইরাসের অজুহাত দিয়ে ঢাকায় না নিয়ে ২৫ এপ্রিল বিকেলে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ লাকী বেগমকে। পরদিন ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ লাকী বেগম মারা যায়। এই দম্পতির রুপাইয়া নামের এক ৬ বছরের কন্যা শিশু রয়েছে। শিশুটির সামনে বাবা তার মাকে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালায় বলে জানা গেছে।