ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তন জীবনযাত্রার পাশাপাশি পরিবেশেও

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৮ এপ্রিল ২০২০

পরিবর্তন জীবনযাত্রার পাশাপাশি পরিবেশেও

শাহীন রহমান ॥ হাঁপিয়ে উঠছে করোনার ভয়ে ঘরবন্দী নগরবাসী। একটু মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে না। ঘরে বন্দী ছেলেমেয়েদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। একটানা বন্দী থাকতে থাকতে দেখা দিচ্ছে মানসিক সমস্যা। কবে এই দশা থেকে মুক্তি মিলবে তাও জানা নেই। অঘোষিত লকডাউনের কারণে জীবনযাত্রার পাশাপাশি পরিবেশগতও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অভিভাবকরা জানান, ছেলেমেয়েরা ঘরের মধ্যে বন্দী থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ। স্কুল-কলেজ বন্ধ। কোথাও যেতে পারছে না। কবে স্কুল খুলবে জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বোঝা যাচ্ছে না। কত দিন এভাবে চলবে শঙ্কার মধ্যে আছি। মিরপুরের বাসিন্দা দুলাল মাহমুদ বলেন করোনার ভয়ে কোথাও বের হতে পারছি না। বাইরে বের হলেই ভয় লাগে। বাজার করে ঘরে ফিরলেও মনের সন্দেহ দূর হয় না। একবার বাইরে গেলে ধুঁক-ধুঁকানি চলে ১৪ দিন পর্যন্ত। কবে এর অবসান হবে জানা নেই। তিনি আরও বলেন, ছেলেমেয়েরা বাসায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। নিরস সময় পার করছে। বিনোদনেরও কোন ব্যবস্থা নেই। কতদিন তাদের এভাবে ঘরে বন্দী করে রাখা যায়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে বাংলাদেশে অঘোষিত লকডাউন চালু হয় গত ২৬ মার্চ। এর আগেই অবশ্য বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লকডাউনে মানুষকে বলা হয় ঘরে থাকতে। জরুরী কাজে বাইরে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করার নির্দেশ আসে। জীবন যাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন কিছু অভ্যাস। যার মধ্যে রয়েছে বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, চোখে-মুখে-নাকে হাত না দেয়া ইত্যাদি। এগুলো তো গেল নিতান্তই ব্যক্তিগত জীবনের কিছু পরিবর্তন। এছাড়াও এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যা হয়তো এক মাস আগে মানুষ চিন্তাও করত না। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাড়িতে বসে অফিস করা। এ ধরনের পরিবর্তনকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও অনেকে আবার বলছেন যে, বন্দী জীবনে হাঁপিয়ে উঠছেন তারা। আসলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক আর নাগরিক জীবনে মানুষ কী ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়েছেন এই এক মাসে? বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল বলেন অফিস বন্ধ ঘরে বসেই কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলে। বাইরে বের হতে না পারলে কার ভাল লাগে। এভাবে কতদিন চলা যায়। স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে লকডাউন শুরু হওয়ায় বেশ আগে থেকেই বাড়িতেই রয়েছে শিশু-কিশোররা। অনেক শিশু রয়েছে যারা বাড়িতে থাকতে থাকতে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছে। অনেকেই চাইছে স্কুলে ফিরতে। কিন্তু উপায় নেই কোন। কবে স্কুল খুলবে এই প্রশ্নের জবাব কারও কাছে নেই। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে জীবনযাত্রাই যেমন অনেক পরিবর্তন এসেছে, পরিবেশগতও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়লেও উন্নতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে পরিবেশের উন্নতির এই ধারা যেন বজায় থাকে। তারা বলছেন করোনার প্রভাবে ঢাকার পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। এখন নেই সেই চিরাচরিত শব্দদূষণের যন্ত্রণা। নেই কোন বায়ুদূষণ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ঘরবন্দী জীবনই বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়েছে।
×