ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে কিছু পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২৮ এপ্রিল ২০২০

রমজানে কিছু পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ একদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি, অপরদিকে পবিত্র রমজান। এ সময়ে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছে। বিষয়টি আমলে এনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত শুক্রবার থেকে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান শুরু হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে। ইতোমধ্যে আদা, মরিচ, ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও মসলাজাতীয় বেশকিছু পণ্যের মূল্য বাড়তি। সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়ে যায় আদার। করোনা সংক্রমণ রোধে আদা, রসুন, এলাচ, লবঙ্গ ইত্যাদি জাতীয় কিছু পণ্যের গুরুত্ব রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিতে তৎপর। অনুরূপভাবে রমজান মাসে ছোলা, ডাল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি চাহিদার কারণে এক্ষেত্রেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা আদায়ের অপতৎপরতায় লিপ্ত। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ৩২ আমদানিকারক গত কয়েকমাসে এ পণ্যের বাড়তি মূল্য নিয়ে মোটা অঙ্কের মুনাফা লুটে নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ৩২ আমদানিকারকের তথ্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণের পর সোমবার খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালিত হয় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে। এ সময় আদা বোঝাই দুটি গুদাম মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু এসব গুদাম মালিক পলাতক রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ৩২ আমদানিকারক গত চারমাসে আদা আমদানি করেছেন ৩ হাজার টনেরও বেশি। এ পরিমাণ আদার আমদানিমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। আমদানিমূল্য অনুযায়ী প্রতিকেজি আদার দর পড়েছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। এ আদা কোন অবস্থাতেই ১শ’ থেকে ১২০ টাকার ওপরে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু অত্যন্ত কৌশলে করোনার অন্যতম প্রতিষেধক হিসাবে গুজব রটিয়ে বাজারে আদার মূল্য সাড়ে ৩শ’ টাকাতে পৌঁছে যায়। এদিকে, বিভিন্ন মসলাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে মরিচ, জিরার পাশাপাশি, ডাল, চিনি, ভোজ্য তেলের দরও বেড়েছে। বাজার সূত্র জানিয়েছে, পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির মূল হোতা। এ পর্যায়ে যে কোন পণ্যের মূল্য বাড়তি থাকলে খুচরা পর্যায়ে তা আঘাত করে থাকে। বাড়তি সব মূল্য শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর বর্তায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, এবার করোনার কারণে ভোগ্যপণ্যর বড় একটি অংশ ত্রাণ সহায়তা হিসাবে বাজার থেকে ক্রয় করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে অসচ্ছল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য সাহায্য হিসাবে দিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে করোনার কারণে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বাড়তি পণ্য কিনে রেখেছে। ফলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য বিক্রি হওয়ার বিষয়টি লক্ষণীয়। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের গুদামজাত করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে যেসব ভোগ্যপণ্য পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে তা আমদানি হয়েছে অন্তত দুমাস আগে। অধিকাংশ পণ্য খালাস হয়েছে এবং কিছু খালাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
×