ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিভাগের জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে করোনা মোকাবেলায় আরও ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে

দুঃসময় থাকবে না ॥ করোনা মোকাবেলায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৭ এপ্রিল ২০২০

দুঃসময় থাকবে না ॥ করোনা মোকাবেলায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগ থেকে উত্তরণে দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দুর্যোগ আসে এবং সেই দুর্যোগকে মোকাবেলাও করতে হয়। আজ এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণে দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। আমি বিশ্বাস করি, এই দুঃসময় থাকবে না, এটি আমরা কাটিয়ে উঠব। আমাদের কল-কারখানাসহ সবই আবার চালু হবে এবং দেশের অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠবে। চিরদিনই অন্ধকার থাকে না, আলো নিশ্চয় আসে। আমরা আবার আলোর পথে যাত্রা শুরু করব। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারী যখন থামবে তখন আমরা খুলব। করোনা মোকাবেলায় আরও ২ হাজার চিকিৎসক এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে। আর এই দুর্যোগের সময় ব্যবসা পরিচালনার জন্য নেয়া ঋণের সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই সুদগুলো যাতে স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায় আর কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন সেটা বিবেচনা করা হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের একখ- জমিও যাতে পতিত না থাকে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার বাইরে থাকা মানুষ যারা হাত পাততে পারে না, তাদের তালিকা দ্রুত তৈরি করার জন্যও দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারীতে কর্মহীন মানুষের সহায়তায় ভিক্ষার জমানো ১০ হাজার টাকা দান করে আলোচিত শেরপুরের সেই বৃদ্ধ নজিমুদ্দিনকে ‘বিশ্বের জন্য মহৎ দৃষ্টান্ত’ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এর থেকে আমাদের সবারই অনেক কিছু শেখার আছে। করেনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সঙ্কট মোকাবেলার কার্যক্রম সমন্বয়ে সোমবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব জায়গায় করোনাভাইরাস বেশি নয়, ধীরে ধীরে সেসব জায়গাগুলো শিথিল করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে। আপনারা (দেশবাসী) যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এই সংক্রমণের হার কমাতে পারেন, যাতে মৃত্যুর হারও কমে, তাহলে আমরা আস্তে আস্তে আপনাদের যোগাযোগ, যাতায়াত, পণ্য পরিবহনসহ অন্যান্য কিছু উন্মুক্ত করে দেব। ইতোমধ্যেই পণ্য পরিবহনকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। যারা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে সবারই সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলেই আমরা এই পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাব, ইনশাল্লাহ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধারাবাহিক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সোমবার রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সুপার, সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। গণভবন প্রান্তে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জলসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারী টিভি ও রেডিও চ্যানেলে ভিডিও কনফারেন্সটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে পাঁচ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৫১টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। স্কুল-কলেজ শীঘ্রই খুলছে না ॥ জীবন-যাপনের জন্য কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করার ইঙ্গিত দিলেও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত (সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) কোন স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না। করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার কমলে তখনই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা হবে। রাজশাহী বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ তোলার আভাস দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু এখন কিছু কিছু ফসল উঠছে, এরপর ফসল লাগাতে হবে। তাই কিছু কিছু জীবন-যাপন আমাদের আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করতে হবে। সেখানেও সবাই নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই কাজ করবেন, সেটাই আমরা অনুরোধ করব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসঙ্গে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল এখন আমরা খুলব না। স্কুল কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটাও খুলব না। অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে যদি না করোনাভাইরাস তখনও অব্যাহত থাকে। যখন এটা থামবে আমরা তখনই খুলব। যাতে বেশি সমাগম না হয়। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস প্রকোপ বাড়তে থাকায় গত ১৭ মার্চ দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস আদালত ও যানবাহন বন্ধ ঘোষণা করে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকতে বলা হয়। এই সাধারণ ছুটি ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে আদেশ জারি করা হয়, সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও একই সময় পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে। তার আগে হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশও আটকে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এবং গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিক শ্রেণীর ভার্চুয়াল শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করা হয়। সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না ॥ কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নেয়া ঋণের সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা ইতোমধ্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন, কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে এই কয় মাস সবকিছু বন্ধ দেখে আপনাদের তো ঋণের সুদ হয়ে গেছে, সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। কারণ এই সুদ এখনই নেয়ার কথা না।’ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এই সুদগুলো যাতে স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায় আর কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন সেটা বিবেচনা করা হবে। কাজেই সেটা নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না। এইটুকু আমি বলব, এটাই আমাদের সব থেকে বড় কথা, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। করোনাভাইরাস পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় তাঁর সরকার ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মৎস্য চাষী থেকে শুরু করে, পোল্ট্রি, ডেইরি বা যারা কৃষি কাজ ও বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো ব্যবসা করেন- তাদের প্রত্যেকের কথা চিন্তা করে এবং অন্যান্য দিকে খেয়াল রেখেই এই এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যেখান থেকে মাত্র ২ শতাংশ সুদে টাকা দেয়া হবে, যাতে তারা তাদের ব্যবসা চালু রাখতে পারেন।’ জেলার ত্রাণ ও করোনা পরিস্থিতি সমন্বয়ে ৬৪ সচিবকে ৬৪ জেলার দায়িত্ব প্রদানসহ সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাজ নেই। বিশেষ করে একেবারে নিম্ন আয়ের লোক, এমনকি ছোটখাটো কাজ করে যারা খায়, তাদের কষ্ট আমরা জানি। কৃষির জন্য পৃথক পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন, যেখানে ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ২১ লাখ মেট্রিক টন ধান-চালসহ খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। একইসঙ্গে করোনা মোকাবেলায় ৬৪ জেলায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৪০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। তালিকায় কেউ যেন বাদ না পড়ে ॥ মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে আরও ৫০ লাখ যোগ করার জন্য রেশন কার্ড প্রদানের তালিকা প্রণয়নকালে যাদের প্রয়োজন তারা যেন কেউ বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তাঁর নির্দেশের কথাও পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভিজিডি, ভিজিএফ এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচীর বাইরে যারা রয়েছেন, যারা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু হাত পেতে চাইতে পারছেন না- তাদের প্রকৃত তালিকা করার জন্য আমি আমার দলের নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখেও সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা চাল এবং টাকা বিতরণ করছি। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে ঈদকে সামনে রেখে আমরা আরেক দফায় খাদ্য বিতরণ করব। যাতে রমজানে কেউ কষ্ট না পান, সেই বিষয়টা অবশ্যই আমরা দেখব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বই এখন স্থবির। অনেকেই এই করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। তাই দুর্ভিক্ষ এড়াতে সাধ্যমতো ফসল উৎপাদন এবং দেশে কোন জমি যেন পতিত না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এক জমিতে একাধিক ফসল ফলানোসহ ঘরের পাশের এক চিলতে জায়গাটুকুও কাজে লাগানো, বাড়ির ছাদে টবে তরি-তরকারি, ফল মূলের চাষ এবং অধিকহারে মৎস্য ও গবাদিপশু প্রতিপালনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। করোনাভাইরাস চিকিৎসায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করছেন তাদের প্রণোদনা দিয়েছি। যদি কেউ অসুস্থ হন তাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সেইসঙ্গে আমরা ৫ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেব। তাদের ভাল-মন্দ দেখছি এবং তারাও যেন সুরক্ষিত থাকে যা যা প্রয়োজন সেটা দিয়ে যাচ্ছি। আর দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে দেশের ৩ হাজার ৪৬৪ চিকিৎসক অনলাইনে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’ অর্থনৈতিকভাবে বিরাজ ধাক্কা ॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন অচলাবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অর্থনৈতিকভাবে বিরাজ ধাক্কা। আজকে সব দেশে আমরা রফতানি করতাম, করোনার কারণে সে দেশগুলো বন্ধ। তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ। আবার আমাদের দেশেও সেই একই অবস্থা আমাদের করতে হয়েছে মানুষের নিরাপত্তার জন্য। কারণ এখানে মানুষের নিরাপত্তাটাই হচ্ছে আমাদের কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সব পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। এ ধরনের অবস্থা কিন্তু পৃথিবীতে হয়নি, আর আমরা দেখিনি। তবে জানা যায়, শত বছরে একবার নাকি এরকম একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিনিয়ত রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে এবং সকলকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার। তিনি বলেন, বাইরের মানুষের সঙ্গে না মেশা, বেশি লোকসমাগম না হওয়া, মানুষ থেকে দূরে থাকেন, নিজের পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখুন। বাইরের লোকের সঙ্গে যত কম মেশা যায়, কম যোগাযোগ রাখা যায়, সেটা সব থেকে ভাল। সেটাই সুরক্ষিত করবে। কারণ এটি হচ্ছে অত্যন্ত সংক্রামক একটা ব্যাধি। এত সংক্রামক, এটা কার যে কখন হবে তা বোঝাও যায় না। এটিই হচ্ছে সব থেকে দুচিন্তার বিষয়। আরও ৮ হাজার ডাক্তার-নার্স নিয়োগ ॥ প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জের সঙ্গে মতবিনিময়কালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার চাপ সামাল দিতে সরকারের আরও ২ হাজার ডাক্তার এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলার ভাল একটা হাসপাতালে আমরা আইসিইউ স্থাপন করব। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আইসিইউ পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। তিনি বলেন, আর করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় সরকার শীঘ্রই ২ হাজার চিকিৎসক এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেবে। নতুন ডাক্তার ও নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, প্রশিক্ষণ শেষে তারা সেবা দেবে। পাবনার সঙ্গে মতবিনিময়কালে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরত, যারা বিদেশ থেকে কাজে যোগ দিতে আসবে তাদের কাজে যোগদানের পূর্বে দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাবনা জেলার সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী যেসব এলাকায় ডেইরি খামার বেশি সেসব এলাকায় দুধ ত্রাণ হিসেবে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সিরাজগঞ্জ-পাবনা এসব এলাকার দুগ্ধ খামারিদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। শিশুদের রিলিফ হিসেবে এই দুধও আপনারা দিয়ে দিতে পারেন। পোল্টি ডেইরি যারা করছেন, এই যে দুধ আমি জানি যেহেতু দোকান-পাট, হোটেল সব বন্ধ। আপনারা অল্প টাকায় সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেন। দুধ দিয়ে ঘি বা অন্যান্য যা যা দরকার তৈরি করে রাখুন, সেটি বহুদিন টিকে থাকবে। ফেলে না দিয়ে কাজে লাগানো বা মানুষকে বিলিয়ে দিলেও তো কাজে লাগে। অনেকে দিচ্ছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী করোনার কারণে মুজিববর্ষের সকল অনুষ্ঠান স্থগিতের কথা উল্লেখ করে বলেন, মুজিববর্ষ উদ্যাপন করব বলে অনেক কর্মসূচী আমরা নিয়েছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা করতে পারিনি। তবে আমরা অনলাইনে করেছি। তারপরও আমি বলব- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন এদেশের মানুষের জন্যই সংগ্রাম করেছেন। মানুষের জন্যই ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন, মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। কাজেই সেই মানুষকে বাঁচানোটা আমাদের জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই বঙ্গবন্ধুর এই প্রিয় বাংলাদেশের প্রিয় মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবনটাকে উন্নত করা, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা আসলে সকলের ক্ষতি করতে এসেছে। কিন্তু এর থেকে আমরা দেশকে মুক্ত রাখব, জাতিকে মুক্ত রাখব, সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি যেন সচল থাকে, আমাদের পরিবহন বিশেষ করে আমাদের খাদ্য এবং চিকিৎসার সবকিছু যেন ঠিকমতো চলে, ব্যবসা-বাণিজ্য যেন স্থবির না হয়, আর বিশেষ করে এখন যেহেতু আমাদের ধান কাটার সময়। কাজেই খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এটা আমাদের বিরাট দায়িত্ব। সেটাও যাতে অব্যাহত থাকে, সবদিকে নজর রেখে আমরা ধাপে ধাপে পদক্ষেপগুলো নেব। প্রধানমন্ত্রী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং ঘরে অবস্থানের জন্য পুনরায় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজ ঘরে বসে আদায়ের জন্য আবারও অনুরোধ জানান। সবাইকে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলে আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে দোয়া করেন- করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ যাতে মুক্তি পায়। আমি বিশ্বাস করি যে, এই দুঃসময় থাকবে না, এটি আমরা কাটিয়ে উঠব। আমাদের কল-কারখানাসহ সবই আবার চালু হবে এবং দেশের অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠবে। আমাদের আলোর পথের যাত্রা আবারও শুরু হবে। সবাই মিলেই আমরা এই পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাব, ইনশাল্লাহ।’
×