ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরবন্দী মধ্যবিত্ত

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২০

ঘরবন্দী মধ্যবিত্ত

করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণে জনজীবন বিপর্যস্ত। দিশেহারাই শুধু নয়, কর্মহীনতার চরম সঙ্কটেও আবর্তিত। এই মুহূর্তে সিংহভাগ মানুষ গৃহবন্দী অবস্থায় অসহায় সময় পার করতে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে। মধ্যবিত্ত আর নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। রুজি রোজগারে এসেছে এক অশনি সঙ্কেত। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া ছাড়াও চাকরি হারানোর আশঙ্কা থেকে প্রাত্যহিক মজুরিতে বঞ্চিত শ্রেণী এখন বাড়িওয়ালারও কঠোর রোষানলে পতিত হচ্ছে। কবে এই দুঃসময়কে অতিক্রম করা যাবে তেমন নির্দেশনাও কেউই দিতে পারছে না। স্বাস্থ্য আর জীবনের ঝুঁকিকে বিপন্ন মানুষ আজ ঘরে বসে অবসর জীবনযাপন করছে। তীব্র অনিশ্চয়তায় কাটছে প্রতিটি মুহূর্ত। হতদরিদ্রদের মাঝে প্রতিনিয়তই হানা দিচ্ছে খাদ্য সঙ্কটের মতো জৈবিক ক্ষুধা। যারা দিন এনে দিন খায় তাদের রুজি রোজগার আজ চরম হুমকির মুখে। ত্রাণ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। সেটাও যে সবার ভাগ্যে জুটছে এমন নয়। আবার যারা মধ্যবিত্ত, একটু সম্পন্ন মানুষ তারা ঘরের বাইরে এসে ত্রাণের জন্য হাত পাততেও বিব্রত হচ্ছেন। চাকরিজীবী মধ্যবিত্তরা, যারা মূলত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদের বেতন ভাতাও আটকে আছে মালিক পক্ষের কাছে। সময়মতো বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় ভবনের মালিকদের দুর্ব্যবহারই শুধু নয়, ঘর থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও জুটছে কপালে। অনেককে বের করেও দিয়েছে বাড়িওয়ালা। ফলে করোনাভাইরাসের চরম দুর্যোগে অসহায় মানুষগুলোর সর্বস্ব হারানোর ব্যথাও কম নয়। ঘরবন্দী মানুষ চরম দুর্গতির মধ্যে করোনার আতঙ্কেও সবাই সর্বক্ষণ শঙ্কিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার জোর দিয়েছেন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। বাজেট এবং খাদ্য সঙ্কটের কোন ঘাটতি হবে না বলেও তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন। কয়েক বছর অনুকূল পরিবেশে খাদ্যশস্যের বহুল উৎপাদনে দেশ এখন প্রায়ই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর বোরো ফসলের উৎপাদনও আশাব্যঞ্জক। এখন ফসল কাটার সময়। পরবর্তীতে কৃষকের গোলায় এই মৌসুমি ধান উঠেও যাবে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের কাছে এমন সোনার ফসল উপযুক্ত মূল্যে কিনে নেয়ার পরিকল্পনাও করেছে। কৃষি খাতেও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে সরকার চাষাবাদে প্রাসঙ্গিক সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। তার সঙ্গে দেয়া ইচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুযোগ। সরকারের পক্ষ থেকে দুস্থ ও নিম্নবিত্তের মাঝে নিত্যপণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়েছে। ঘরবন্দী মানুষের খাবার পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা নিশ্চিত হলেও সবাই পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ আছে। ফলে সাহায্য চাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হেলপ হটলাইন খোলা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চাওয়া হলে তা ঘরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে সাময়িক ও তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মিটলেও স্থায়ী ব্যবস্থাপনায় ফিরে যেতে ব্যর্থ হলে সমস্যার পুরোপুরি সুরাহা হতে কত সময় লাগবে কে জানে?
×