ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা (কোভিড-১৯), বৈশ্বিক মহামারি ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৭ এপ্রিল ২০২০

করোনা (কোভিড-১৯), বৈশ্বিক মহামারি ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বর্তমান বিশ্বে এক চরম বিপর্যয়ের নাম। মধ্য চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হয়ে এটি আজ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ৩১শে ডিসেম্বর উহান শহরে নিউমোনিয়ার মত একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ই জানুয়ারী প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কিভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত কোনো প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে ঢুকেছে, তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। বর্তমানে এই ভাইরাসে গোটা বিশ্বের প্রায় ২২৫ টি দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০,০৪,৮৯১ জন প্রায়। যার মধ্যে মোট মৃত্যু ২,০৭,২৫৭ সুস্থ ৮,৮২,৯৫৪ জন। বাংলাদেশে বর্তমান আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা ৫,৯১৩ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৩১ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১৫২ জনের। এদিকে এ ভাইরাসটির বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত কার্যকরি কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাক্সিন না থাকায় এটি প্রতিরোধে লকডাউন বা ঘরবন্দি থাকা কেই বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকারি সমাধান বলে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এখন ঘরবন্দি জীবন যাপন করছে। করোনা ভাইরাস এর কারনে বিভিন্নদেশে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকারখানা বন্ধ প্রায়। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ, বহু মানুষের আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। পুরো বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ে পতিত হচ্ছে, বাংলাদেশ যার ব্যাতিক্রম নয়। বাংলাদেশে প্রথম থেকেই লকডাউন বা হোম কোয়ারেন্টাইন এর ব্যাবস্থা করা হলেও বস্তুত এটা তেমন কার্যকারিতা পাচ্ছেনা, কারণ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে সময়ের ব্যাবধানে। এর জন্য গণসচেতনতা, সাধারণ মানুষের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব ও নানা অব্যাবস্থাপনা দায়ী। কিন্তু লকডাউনের প্রভাবে কর্মমুখি মানুষের দুর্দশা বেড়েই চলেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা ও ই সি ডি হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, বিশ্বঅর্থনীতির উপর করোনা ভাইরাস এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক মন্দার শেষ পরিণতি দুর্ভিক্ষ বয়ে আনতে পারে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট প্রায় ১৭.৫১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য মজুদ রয়েছে এবং খাদ্যশষ্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে উৎপাদন কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি বিবেচনায় ও ব্যাবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা কাটিয়ে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে অনেক দেশ তাদের লকডাউনের মধ্যে পুনঃরায় শিল্পকারখানা চালু করার চিন্তাভাবনা করছে। ইতিমধ্যে চীন তাদের কারখানাগুলো চালু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের শিল্পকারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও কিছু ক্ষেত্রে সীমিত আকারে চালু করেছে বা চালু করা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। তাই অর্থনৈতিক সমবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাংলাদেশ সরকারের গার্মেন্টস শিল্প চালুর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। সতর্কতা মেনে যেমন ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছে তেমন দেশকে বাঁচিয়ে রাখতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও অনুরুপভাবে চালু রাখা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। লেখকঃ মোঃ আব্দুল জলিল জেনিথ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×