ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে ১০ একর জমির ধান পানিতে ॥ দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২৭ এপ্রিল ২০২০

মুন্সীগঞ্জে ১০ একর জমির ধান  পানিতে ॥ দিশেহারা কৃষক

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারায় ১০ একর জমির বোরো ধান এখন পানিতে। বৃষ্টিতে পুরো জমিতে পানি আর পানি। ধানের গলা পর্যন্ত পানি ঢুকেছে। জমি আর পাশের খালের পানি এখন একাকার। বৈশাখের শুরুতে জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষককুল। এখনকার ধানচাষীরা এখন দিশাহারা। আধারা ইউনিয়নটির জাজিরার বসারচর ব্রিজ সংলগ্ন পুরো ধানের বিলে পানি থৈ থৈ করছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রবিবার দুপুরে ধান খেতের পাশের সড়কে অবস্থান করছেন কৃষকরা। কি করবেন দিশা পাচ্ছেন না। এখন ধান পাকার সময়। জমির সব ধান পাকেনি। মাঝে মাঝে কিছু ধান পেকেছে আবার কিছু ধান কাঁচা। কাঁচা-পাকা সংমিশ্রণ থাকায় ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কৃষক মোঃ সাফা কাল বলেন, এই বিলের সব ধানের জমিতেই এখন পানি। উঠতি ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। কারণ হিসেবে জানান, এখন ছিল ধান কাটার মৌসুম। কিন্তু জমির ধান-পাকা আর কাঁচা। এই কাঁচা পাকা ধানের কারণ বের করতে পারছেন না এই অভিজ্ঞ কৃষক। তিনি বলেন, বেশি দামে বিএডিসি ভাল বীজ এনে রোপণ করলাম। আর সেই বীজের যদি এই দশা হয়, আমরা যাব কোথায়? তিনি বলেন, এলাকার চাষীরা বিএডিসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই অঞ্চলের ডিলার হারুন মুন্সীর কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে। কিন্তু আমাদের বীজ ভাল দেয়নি। মিশানো বীজ দেয়ার কারণে আমার এখন সর্বস্ব হারাতে বসেছি। এই ধান চাষে সব টাকা পয়সা খরচ করে, পথে বসার উপক্রম। কৃষক সাফা আরও বলেন, প্রতি বছরই এই বিলে আমরা ধান চাষ করি। কিন্তু এমন সর্বনাশ এর আগে আর হয়নি। পানি ধানের গলায়। কিন্তু পুরো ধান না পাকায় কাটা যাচ্ছে না। বড় মুশকিলে আছি এখন। এখানে প্রায় ১০ একর ধান জমির এই অবস্থা। আমাদের এই ধান ঘরে তুলতে পারব কিনা তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। কৃষকের এই অভিযোগ নিয়ে কথা হয়-ডিলার হারুন মুন্সীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএডিসির ইনটেক ধান বীজ বিক্রি করেছি। যদি কোন সমস্যা থাকে এর পুরো দায়-দায়িত্ব বিএডিসির। আমাদের নয়। আমরা সামান্য এই বীজ বিক্রি করেছি মাত্র। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মোঃ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএডিসির ধান বীজের জাতে মিশ্রণ ছিল বলেই প্রাথমিকভাবে এমনটি মনে হচ্ছে। মিকচার বীজ ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা খোঁজ খবর করে দেখছি। তিনি বলেন, শতভাগ ধান পাকার জন্য অপেক্ষা না করে ৮০ শতাংশ পাকার পরই ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বোরো ধানের এক থেকে দেড় ফুট পানি জমলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর এই পানি বর্ষার পানি নয়, বৃষ্টির পানি জমেছে। রোদ উঠলেই এই পানি কমে যাবে। তাই এক্ষুণি ক্ষতির বিষয়টি বলা যাবে না। তিনি বীজের বিষয়টি নিয়ে বিএসিডি ভাল বলতে পারবে বলে জানান। মুন্সীগঞ্জ বিএডিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক রুহুল কবির এই প্রসঙ্গে বলেন, বিএডিসি’র বীজে এমন হওয়ার কথা নয়। কৃষক হয়তো সময় মতো রোপণ করেনি। ধানের চারা ঠিক সময় বা বেশি বড় করে লাগালে সমস্যা হতে পারে। জমির কিছু ধান কাঁচা আর কিছু ধান পাকা, বীজের সংমিশ্রণ কিনা এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ধান বীজের সমস্যা হলে ধানের চারাই গজাতো না। পুরো দায় তিনি কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেন। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন, যুগের পর যুগ ধরে তারা ধান চাষ করেন, কখন ধান রোপণ, চারা তৈরি সবই তারা অভ্যস্ত। একই সময়ে ধান রোপণ হলো একই জমিতে একই বীজে। সেখানে এমন কেন হবে-মাঝে মাঝে ধান একদম কাঁচা আবার পাকা। মাধবপুরে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান নিজস্ব সংবাদদাতা হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ব্লাস্ট রোগে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান। এ নিয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোরো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫শ’ হেক্টর। তন্মধ্যে ব্রি-২৮ রোপণ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার, ব্রি-২৯ ৪ হাজার ৮শ’ এবং বাকি জমিগুলোতে ব্রি-৫৮, ৮৯ ও ৮৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ব্রি-২৮ ধান সম্পূর্ণরূপে পাকা হওয়ার পর কৃষকের গোলায় ওঠার কথা থাকলেও ব্রি-২৮ ধানের শীষগুলো লালচে ও সাদা রং ধরে জমিতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বর্গা চাষীসহ সকল কৃষকরাই এ ক্ষতিতে পতিত হচ্ছেন। প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করতে গিয়ে পানি সেচ বাবদ ৮শ’ থেকে ১ হাজার, জমিতে ধান রোপণে ১ হাজার, সার ও কীটনাশকে ২ হাজার, আগাছা পরিষ্কারে ৬শ’সহ সর্বশেষে ধান কাটা দূরত্বভেদে ১৫শ’ থেকে ২৫শ’ পর্যন্ত খরচ করার পর ফলাতো ধানের পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়। দরিদ্র কৃষকরা এত টাকা ব্যয় করে চাষাবাদ করা জমির ধান সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাতসহ খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল। উপজেলার বেজুড়া গ্রামের ১৫০ শতাংশ জমির বর্গাচাষী রকেট মিয়া, ২৪০ শতাংশ জমির বর্গাচাষী কৃষক বাদল ও সঞ্জু রক্ষিতসহ শতাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়-কয়েক হাজার একরের ফসলের মাঠের ব্রি-২৮ ধানের জমিগুলো সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে বোরো চাষ করে এখন তারা বিপদগ্রস্ত। তাদের ধারণা গত ২ এপ্রিলের প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির কারণে এরকম হতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম লক্ষ্যমাত্রায় ধানের ফলন অর্জনের ব্যাঘাতের কথা স্বীকার করে জানান, গত ২ বছর যাবত ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় আমরা ওই জাত চাষাবাদে বারণ করে বিকল্প হিসেবে ব্রি-৮১, ৮৪ ও ৮৮ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। তারপরও অনেক কৃষক নিজেদের মতো করে ২৮ রোপণ করে সময়মতো পরিচর্যা না করায় এ রোগের দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এ বছরের শিলাবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া এবং দুধ অবস্থায় গান্ধী পোকার আক্রমণের কারণে এ রোগ দেখা দিয়েছে।
×