ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিটামিন সি দেহের ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে বেশ কার্যকর। এটি মানবদেহের জন্য অনেক জরুরী একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। যা আমাদের দাঁতের গোড়া শক্ত করতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ২৭ এপ্রিল ২০২০

 কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়

সাবিহা রহমান ॥ ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি আমাদের সকলেরই আছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যা কমতে থাকে। বয়স বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। যার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় বেশি। তবে শিশু ও কম বয়সী মানুষদেরও মাঝে মাঝে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে। ইমিউনসিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই জরুরী। রোগ প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি না থাকলে যে কোন রোগেই জর্জরিত হয়ে যেতে পারেন আপনি। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও তখন বেশি হয়। ইমিউন সিস্টেমে ঘাটতি দেখা দিলে সারাবছরই রোগে ভুগতে হয় মানুষদের। পর্যাপ্ত শক্তি না থাকার ফলে দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নানান কারণে আমাদের দেহের শক্তি বা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তখন দেহে নানান ঘাটতি দেখা দেয়। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ও কায়িক পরিশ্রম করলে এই ঘাটতি পূরণ হতে পারে। তবে আগে আমাদের জানা উচিত কেন আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। চলুন তা হলে জেনে নেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমে ঘাটতি কেন দেখা দেয়! রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন কমে ও বাড়ানোর উপায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন কমে? ১) অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় খুব জলদি। বাইরের কোমল পানীয়, টমেটো সস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই খাদ্য তালিকা থেকে এসব বাদ দিতে হবে। ২) অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা খুব বাজেভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেনশন করে দেহের ক্ষতি করবেন না। ৩) অতিরিক্ত পরিশ্রম কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়। ফলে অচিরেই আপনি রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়ানো যায়? আরও নানা কারণে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যে কারণেই হোক না কেন, রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর জন্য কিছু সামান্য পরিবর্তনই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই কী কী উপায়ে আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে পারব। প্রোটিন প্রোটিন গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন। প্রোটিন আমাদের দেহের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। বিভিন্ন রোগবালাই মোকাবেলা করতে প্রোটিনের জুড়ি নেই। শরীরের অভ্যন্তরীন শক্তি বাড়াতেও প্রোটিন বেশ কার্যকর। রোগবালাই, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে উন্নতমানের প্রোটিন গ্রহণ করা অতীব জরুরী। ডিম, মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, কচুশাক ও বিভিন্ন প্রকার ডালে রয়েছে ভাল মানের প্রোটিন। তাই আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমন্বিত খাদ্য রাখুন। ভিটামিন সি ভিটামিন সি দেহের ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে বেশ কার্যকরী। এটি মানব দেহের জন্য অনেক জরুরী একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। যা আমাদের দাঁতের গোঁড়া শক্ত করতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি-তে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ও বয়সের ছাপ লুকাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের মতো রোগ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। দেশীয় কিছু ফলে আপনি খুব সহজেই ভিটামিন সি পেতে পারেন। যেমন- আমড়া, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমলকী, বরই, বাতাবী লেবু ও কমলালেবু ইত্যাদি। সবুজ শাকসবজি যেমন- কাঁচা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, পুঁইশাক ও পালং শাকেও প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। জিঙ্ক জিঙ্ক রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শ্বেত রক্ত কণিকার ক্ষমতা হ্রাস পেলে দেহের ইমিউন সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় কাঠবাদাম, চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, শিমের বিচি, দুধ, মাখন ও পনির রাখলে জিঙ্কের অভাব পূরণ হয়। ভিটামিন বি-১২ দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন বি-১২ বেশ কার্যকর। এর পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। দুগ্ধজাত খাদ্যে ও ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিতামিন বি-১২ রয়েছে। ব্যায়াম ঘরে সামান্য ব্যায়াম, যোগাসন ও ধ্যানের মাধ্যমেও ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করতে না পারলে রোজ ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। এতেও আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কেননা রোজকার এই সামান্য ব্যায়াম আপনার দেহের রক্ত চলাচল করার ক্ষমতাকে সচল রাখে। যা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। তাছাড়া নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত ঘুম মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনবে আপনার জন্য। মনে রাখবেন সুস্থ থাকার জন্য হাসিখুশি থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ ও মানসিক চাপ এড়িয়ে বাড়িয়ে ফেলুন আপনার দেহেরই মিউনসিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দূরে রাখুন রোগবালাই, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণকে।
×