ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

আবার সচল হবে অর্থনীতির চাকা

প্রকাশিত: ০১:০১, ২৬ এপ্রিল ২০২০

আবার সচল হবে অর্থনীতির চাকা

বিশ্ব এখন এক মহাদুর্যোগের সম্মুখীন। নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি চরম পর্যায়ে। স্মরণকালের এ স্বাস্থ্যঝুঁকির মোকাবেলায় সকল রাষ্ট্র, ব্যক্তি ? সমাজ নির্বিশেষে অবিরাম সংগ্রাম করছে। ভাইরাসের সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক ঝুঁকি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চিহ্ন এখনই দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তথা বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সম্পর্কে বলেছে ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কোন দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির হারও দেখা যাবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হারও ৭ থেকে ৮ শতাংশের বৃত্ত থেকে একেবারেই দ্রুত নেমে ২-৩ শতাংশে দাঁড়াবে। যেহেতু পুরো বিশ্বব্যবস্থাই বিশ্বায়নের কারণে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাই বাংলাদেশও বিশ্বমন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা আমাদের জন্য বাহ্যিক আঘাত। উপরন্তু রয়েছে আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি নাগরিক আজ চিন্তিত। অর্থনীতিকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে বের করে সচল রাখার উপায় আজকের লেখার মূল আলোচ্য বিষয়। করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থবহ কৌশল উদ্ভাবনসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে সম্মিলিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কোভিট-১৯ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল আঞ্চলিক কনফারেন্সে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাস এবং অর্থনীতিতে এ সংক্রান্ত প্রভাব মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা জানি না এই মহামারী কতদিন থাকবে। এটা ইতোমধ্যেই অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমাজকে সঠিক পথে আনতে হবে, এই ক্ষত এবং ভয় থেকে জনগণকে বেরিয়ে আসায় সহযোগিতা করতে হবে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে। এছাড়াও অভিবাসী শ্রমিকদের বোঝা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার জন্য একটি অর্থবহ বৈশ্বিক কৌশল অবলম্বন করা উচিত। তিনি আরও বলেছেন, অভিবাসী শ্রমিকরা খুব কঠিন সময় পার করছেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাকরিহীনতা যেটা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। কাজেই আমাদের একটি অর্থবহ বৈশ্বিক কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে করে এই বোঝা এবং দায়িত্বকে ভাগ করে নেয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলো অর্থনীতিকে সচল ও পুনরুজ্জীবনে যথেষ্ট সহায়ক হবে। তবে প্রথম শর্ত হচ্ছে এগুলোর দ্রুত ও সঠিক বাস্তবায়ন। প্যাকেজগুলো তিনটি পর্যায়ে প্রথম তিন মাস, দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বল্পমেয়াদি আগামী অর্থবছর এবং তৃতীয় পর্যায়ে মধ্যমেয়াদী পরবর্তী তিন অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে। অতএব এগুলোর সাফল্যের জন্য প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বাজারকেন্দ্রিক সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তার মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতকে আরও সুসংহত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। কারণ বেশির ভাগ অর্থনৈতিক প্যাকেজ ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। রফতানি শিল্পগুলোকে অতিদ্রুত সচল ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে। পোশাক শিল্পের ওপর বেশি নির্ভরশীল না থেকে দ্রুত রফতানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেজন্য প্রণোদনা প্যাকেজও আরও প্রসারিত করতে হবে। দেশের বন্দরগুলো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, উৎপাদন উপকরণ (গ্যাস, বিদ্যুতসহ), কাস্টমসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন অঙ্গের দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বড় বড় শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ছোট-মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা, কৃষি, মত্স্য, পোলট্রি, মত্স্য ও পশুপালন সব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে ঋণ ও অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্কুলানমুখী মুদ্রানীতির মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখতে হবে। অবশ্য সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যেন নাগালের বাইরে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর বাংলাদেশের ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ব্যাঙ্ক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সরকারের রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারী সহায়তা আরও বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ মোট দেশজ আয়ের ৫ শতাংশের অধিক করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সরকারী ব্যয় কমানো, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কম অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে অর্থের সাশ্রয় করা যেতে পারে। আমদানির ক্ষেত্রে রফতানিমূলক শিল্প ও দেশজ পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর ধার্যকৃত ট্যাক্স, শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করা যেতে পারে। বর্তমানে কল কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রকৃত জিডিপি সঙ্কুচিত হচ্ছে, মানুষের আয়, কর্মসংস্থানে ছেদ পড়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলায় অর্থ সংস্থানের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সরকারকে টাকা ছাপানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায়, টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। অর্থনীতিতে সঙ্কট সবেমাত্র শুরু। এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে টাকা ছাপিয়ে কতদিন সামাল দেয়া যাবে? টাকা ছাপানো দোষের কিছু নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রয়োজন অনুযায়ী একাজটি করে থাকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে। তবে অর্থনীতিতে বিদ্যমান পরিস্থিতির মতো সঙ্কট মোকাবেলায় এমুহূর্তে টাকা ছাপানোর পরামর্শ আদৌ কি গ্রহণযোগ্য? টাকা ছাপানো হচ্ছে এ জাতীয় ক্ষেত্রে উপায়হীন হলে সর্বশেষ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে সঙ্কট মোকাবেলায় টাকা ছাপানোর কারণে হাঙ্গেরীর অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। দৈনিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছিল সর্বোচ্চ দৈনিক ২০০ শতাংশ। প্রতি পনেরো ঘণ্টায় দ্রব্যমূল্য দ্বিগুণ হচ্ছিল। বর্তমানে সরকারের আয়ও মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। রফতানি আয়, কর আদায়, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের প্রবাহ সব খাতেই ধারা প্রচ- নেতিবাচক। এর মধ্যেও সরকার বাজেটের বিভিন্ন খাত সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে সাধুবাদ দিতেই হয়। আমরা জানি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির তিনটি বড় খাত হচ্ছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত। প্রতিটি খাতের কয়েকটি উপখাত আছে। কৃষির প্রধান উপখাতগুলো হলো, শস্য উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদ। স্বল্পমেয়াদে এসব উপখাতে উৎপাদন না কমলেও দেশী ও বিদেশী অর্থনীতিগুলো অবরুদ্ধ থাকার কারণে এসব উপখাতের উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্যের ওপর নিম্নমুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে অর্থনীতিতে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শিল্প খাতে, বিশেষ করে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ক্ষতির মাত্রা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ খাতে প্রতিদিনের অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক ক্ষতি সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে সেবা খাতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বেচাকেনা এবং জরুরী সেবা ব্যতীত এ খাত মূলত অবরুদ্ধ। সব ধরনের যোগাযোগ (সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথ), পর্যটন, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেটসহ সব প্রকার সেবা একেবারেই বন্ধ। স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারী অংশটিতেও এক প্রকার অচল অবস্থা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে সেবা খাতে প্রতিদিনের অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা। তাই প্রতিদিন কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে গড়ে মোট অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের এই চলতি ক্ষতির পরিমাণ লকডাউন অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উর্ধমুখী হতে পারে, যা এ মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব হয়নি। তথ্যমতে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ দিনের লকডাউন অবস্থায় অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে ১ লাখ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যেহেতু পুরো এপ্রিল মাসকে করোনার ভয়াবহতা হিসেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকলে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা চলে, লকডাউন অবস্থা পুরো মে মাস এমনকি জুনেও অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে মে মাস শেষে অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের মোট দেশীয় উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ। মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির পরিমাণ এ মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব না হলেও তা আঁচ করা অসম্ভব নয়। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে বেশির ভাগ ছোটখাটো ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প আরও বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা আশা করি, মে মাস শেষে অর্থনীতি ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে এবং সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে। যদি মে মাসের পরেও অর্থনীতি উন্মুক্ত করা সম্ভব না হয় তাহলে রাজস্ব আদায় ও জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে, যা কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন হতে পারে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার উপায়গুলো তাই আগে থেকেই খুঁজতে হবে। এখন পর্যন্ত সরকার যেসব প্যাকেজ নিয়েছে, এর অধিকাংশই কার্যকর হবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর। কিন্তু গরিব মানুষ আপৎকালীন খাবার পাবে কোথায়। ওএমএস-এর চাল দিয়ে তো সারাদেশের সঙ্কট মেটানো যাবে না। ফলে গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্রুত খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তা করা না হয়, ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে। কারণ, ক্ষুধা কাঁটাতার মানে না, রাষ্ট্রের সীমারেখাও চেনে না। ইউরোপের অন্যতম পাওয়ারহাউস ইতালিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে পুলিশি পাহারা বসাতে হয়েছে সুপারমার্কেট রক্ষা করার জন্য। যদি মানুষ খাবার না পায়, আমাদের দেশের অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলোতে হামলা হবে। কেউ এ থেকে রেহাই পাবে না। সঙ্কটের শেষ এখানেই নয়। ইতোমধ্যে পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে। যেহেতু মানুষ টাকা খরচ করছে না, ফলে অধিকাংশ পণ্যের দাম কমবে। খাবার আর ওষুধ ছাড়া অন্য কোন সামগ্রী এই মুহূর্তে কেউ কিনবে না। অবশ্য এসব দোকানও বন্ধ। এক কথায় চাহিদা ব্যাপকভাবে কমতে পারে। যে কোন মন্দার সময় এটাই হয়। ফলে ওই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ইনফ্লেশন হয় না, বরং ডিফ্লেশনের ঝুঁকি তৈরি হয়। আর যদি এ রকম হয়, তাহলে দুর্ভিক্ষ লেগে যাবে। ফলে টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প থাকবে না। স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। ইতোমধ্যেই তেলের মূল্য ইতিহাসে এই প্রথম মাইনাসে চলে গেছে। জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সম্মতিক্রমে, ধাপে ধাপে এলাকাভিত্তিক লকডাউন প্রত্যাহার করলে সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে এক সময় অর্থনীতির সচলতার পথও খুঁজে পাব আমরা। অর্থনীতির চাকা চলতে শুরু করবে আবার আগের মতোই এমনটাই প্রত্যাশা আপামর জনসাধারণের।
×