ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা হবে না

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৫ এপ্রিল ২০২০

সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা  হবে না

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ এবার বাংলাদেশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রায় ৭শ’ রোহিঙ্গা বোঝাই দুটি ফিশিং ট্রলার গভীর সমুদ্রে সাগরে ভাসছে। মালয়েশিয়া গ্রহণ করেনি। থাইল্যান্ডেরও না। এরা ঢুকতে চায় বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভাসমান এসব রোহিঙ্গাকে কোনভাবেই বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। কোন অবস্থাতেই নেয়া হবে না। একবার নেয়া হয়েছে বলে বারবার নেয়া হবে তা কখনও হতে পারে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল ও নৌপথের পুরো সীমান্ত সিল করা আছে। করোনা পরিস্থিতিতে নজরদারি কঠোর পর্যায়ে রয়েছে। কোন অবস্থাতে যাতে ওপার থেকে কোন রোহিঙ্গা এদেশে চলে আসতে না পারে সেদিকে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত বুধবার ৩৯৬ রোহিঙ্গা বোঝাই একটি মিয়ানমারের ফিশিং ট্রলার টেকনাফের উপকূলে ভিড়ে। এ ট্রলারটি কিভাবে বাংলাদেশের সাগর সীমানায় এল এবং টেকনাফ উপকূলে রাতের বেলায় পৌঁছে গেল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত নৌবাহিনী এদের গ্রহণ করেছে এবং কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর দুদিন পর আরও ২৬ জনকে খুঁজে বের করা হয়েছে, তারা মূলত ওই ৩৯৬ দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। কিন্তু তারা নৌবাহিনী অভিযান চালানোর আগে পালিয়ে যায়। এদিকে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গার এদেশে চলে আসার একটি অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এপারে আশ্রিত প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আত্মীয় স্বজনই এখনও ওপারে রয়েছে। এছাড়া আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যারা সাহায্য সহযোগিতা করছে এরাও পরোক্ষভাবে ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের এদেশে চলে আসার ক্ষেত্রে ইন্ধন দিচ্ছে। এ ইন্ধন কেন? তা তাদেরই জানা। তবে এতে করে আন্তর্জাতিক কিছু এনজিও সংস্থার যে লাভ রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে আছে এসব রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় এরা নতুন তৎপরতা শুরু করেছে। ওপারের দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য সাগর পথে মালয়েশিয়া যাচ্ছে। সেখানে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে কোন অবস্থাতেই নামতে পারছে না। ফলে তাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যে ৩৯৬ রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি এসেছে সেটি অনুরূপ একটি অংশ। বর্তমানে যে দুটি ট্রলার গত কয়েকদিন ধরে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে তা আন্ধামান সাগরের নিকটবর্তী। এরা প্রথমে মালয়েশিয়ার লংকাউ দ্বীপে নামতে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন বঙ্গোপসাগর ও আন্ধামান সাগরের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানিয়ে দিয়েছেন, যেসব দেশের নিকটবর্তী এলাকায় এরা অবস্থান করছে সেসব দেশেরই দায়িত্ব রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুরা ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের ব্যাপারে সন্নিহিত সকল রাষ্ট্রের অধিকতর দায়িত্ব ও সমন্বয় ভাগ করে নেয়া প্রয়োজন। পক্ষান্তরে, লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সমুদ্র ভাসমান থাকা এসব রোহিঙ্গাকে যেন বাংলাদেশ উদ্ধার করে। সংস্থার মতে, দুই ট্রলারে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। এরা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে আবদুল মোমেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিছুদিন পর পর রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা সমুদ্র পথে পাড়ি জমায়। কোন দেশে নামতে না পেরে ভাসমান থাকে। এ অবস্থায় আমাদের অনুরোধ করা হয় তাদের গ্রহণের জন্য। ইউএনএইচসিআরও অনুরোধ করেছে এই বলে যে, রোহিঙ্গারা মরে যাচ্ছে আপনারা নেন।
×