ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে পার্সেলে ইফতার সামগ্রী বিক্রি

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২৬ এপ্রিল ২০২০

হোটেল-রেস্তরাঁ থেকে পার্সেলে ইফতার সামগ্রী বিক্রি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ করোনাভাইরাসের করালগ্রাস থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং মহামারী ঠেকাতে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানে ফুটপাথে বিকেল পাঁচটার পর ইফতারির কোন দোকান বসতে দেয়া হয়নি। ঢাকার অধিকাংশ বড় রাস্তায় ও হোটেল রেস্তরাঁর সামনে কোন ইফতারির দোকান দেখাও যায়নি। তবে পাড়া মহল্লার অলিগলিতে কিছু কিছু ইফতারির দোকান খোলা ছিল। তবে বিশেষ বিবেচনায় অত্যন্ত মানবিক কারণে রোজাদারদের কথা চিন্তা করে সীমিত পরিসরে হোটেল রেস্তরাঁকে পার্সেল বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে হোটেল রেস্তরাঁকে অবশ্যই ভেতর থেকে পার্সেল বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্বও কঠোরভাবে মানতে হয়েছে। প্রথম রোজায় দোকান থেকে বিকেল পাঁচটার পর কিছু কিছু ইফতারি বেচাকেনা হলেও ভবিষ্যতে তা করতে দেয়া হবে না। এমন নির্দেশনা মানতে পুলিশের তরফ থেকে ঢাকার সব এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ইচ্ছে থাকলেও করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে পবিত্র রমজানের মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হয়েছে। এজন্য ইফতারি বিক্রির ক্ষেত্রে আগের নিয়ম মোতাবেক পূর্ব ঘোষিত সময়সীমা মানতে হবে সবাইকে। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত পাড়া মহল্লার দোকান খোলা থাকবে। আর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। এমন নির্দেশনা রমজান মাসেও কার্যকর থাকবে। প্রথম রোজায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল করা হলেও ভবিষ্যতে তার সুযোগ থাকছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, দেশ ও জাতির স্বার্থে ইচ্ছে থাকলেও পবিত্র মাহে রমজানের মধ্যেও কঠোর হতে হচ্ছে পুলিশকে। কারণ এর আর কোন বিকল্প নেই। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে না পারলে দিনকে দিন করোনাভাইরাস দেশে আরও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এজন্য বিকেল পাঁচটার পর কোন ধরনের কাঁচাবাজার বসতে দেয়া হয়নি। এমনকি রোজার জন্য ইফতারির দোকানও না। আর পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতেও কোন ধরনের ইফতারির দোকান বসতে দেয়া হয়নি। যদিও কিছু ব্যতিক্রমও ছিল। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে। জেল জরিমানা করা হবে। ইতোমধ্যেই গত ১৯ এপ্রিল থেকে হালনাগাদ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার দায়ে এবং অহেতুক ঘোরাফেরার দায়ে দুই শতাধিক মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে। রোজার মধ্যে অভিযানের মাত্রা ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান জানান, আগের নিয়মেই দোকানপাট খোলা থাকবে। কোন হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যেই মানুষকে ঘরে রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাড়া-মহল্লার দোকানপাট পবিত্র মাহে রমজানের মধ্যেও ইচ্ছে থাকলেও বিকেল পাঁচটার পর খোলা রাখতে দেয়া হয়নি। যদিও প্রথম রোজায় এমন কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিকেল পাঁচটার পর কোন দোকানপাট খোলা রাখতে দেয়া হবে না। তবে হোটেল রেস্তরাঁ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রোজাদাররা ইফতারি সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে তার সময়সীমা সন্ধ্যা ছয়টার পর কোনভাবেই হবে না। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত শুধু মানবিক কারণে রোজাদারদের কথা চিন্তা করে কিছুটা শিথিল থাকবে। তবে দোকানের সামনে কোন ধরনের ইফতারির দোকান বসতে দেয়া হয়নি। ভেতর থেকে পার্সেল বিক্রি করতে হয়েছে। তাও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাও হয়েছে। আর আগের মতো ফুটপাথে ইফতারি দোকান বিকেল পাঁচটার পর বসতে দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, র‌্যাব করোনার মুহূর্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারী বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। এরপরও সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন নিয়ম ভেঙ্গে অলিতে-গলিতে জমায়েত হচ্ছে। আড্ডা বসছে। আড্ডা সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সন্ধ্যার পরে কোথাও আড্ডা, জমায়েত হতে দেয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা না হলে, সেখানেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। টহল দেবে র‌্যাব। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে র‌্যাবের প্যাট্রলিং আরও বাড়ানো হবে। করোনার দুর্যোগ মুহূর্তে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করছে র‌্যাব। সবজিবাহী যানবাহন আসছে, র‌্যাব সেখানে সহযোগিতা করছে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সবজির গাড়িতে মাদক আসছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেসব আটক করা হচ্ছে।
×