ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওমান দিল্লী চেন্নাই থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ৬১৮ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 ওমান দিল্লী চেন্নাই থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ৬১৮ বাংলাদেশী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওমান, দিল্লী ও চেন্নাই থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ৬১৮ বাংলাদেশী। শুক্রবার তিনটি ফ্লাইটে এসব বাংলাদেশী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার পর তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় ওমান এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ২৮৯ বাংলাাদেশী ঢাকায় আসেন। যাত্রীরা সবাই সুস্থ আছেন। তারা সেখান থেকে স্বাস্থ্য সনদ নিয়েই দেশে ফিরেছেন। এদিকে চেন্নাই ও দিল্লী থেকে দুটি আলাদা ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩২৯ বাংলাদেশী। দিল্লী থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটে ১৬৩ জন এবং চেন্নাই থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইটে ১৬৬ যাত্রী ঢাকা আসেন। নয়াদিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন তথা বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও সহযোগিতায় এসব যাত্রীকে ফিরিয়ে আনা হয়। যাত্রীদের দিল্লী থেকে ঢাকায় পাঠানোর সময় মোহাম্মদ ইমরানসহ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা ঢাকায় ফেরত বাংলাদেশের যাত্রীদের সব ধরনের সহযোগিতা করেন। এসব যাত্রীর বেশির ভাগই চিকিৎসাধীন রোগী। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রবিবার আরও একটি ফ্লাইটে চেন্নাই থেকে ১৬৪ বাংলাদেশীর দেশে ফেরার কথা। এদের বেশির ভাগই ব্যাঙ্গালুরুর নারায়না হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে আটকে পড়েছিলেন। দুই দেশের সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে। ২৫ মার্চ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর নয়াদিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং কলকাতা, মুম্বাই, গুয়াহাটি ও ত্রিপুরার মিশনগুলোর সহযোগিতায় প্রায় এক হাজার বাংলাদেশী বিমান ও স্থলপথে দেশে ফিরেছেন। যারা এখনও ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যথাসময়ে হাইকমিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপে জানানো হবে। ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান, রেল এবং গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে। বিদেশ থেকে প্রবাসী ভারতীয়দের প্রত্যাবর্তনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে। কূটনীতিবিদসহ সব বিদেশীর লকডাউন সংক্রান্ত অনুশাসনগুলো মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে একদিকে দেশের বিমানবন্দরে লকডাউন, অপরদিকে ভারতেও লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত। এমন সময়টাতে দীর্ঘদিন আটকা পড়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা। থাকা-খাওয়ার কষ্টের পাশাপাশি শেষ হয়ে যাচ্ছিল হাত খরচের টাকা। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের চোখে মুখে দেশে ফেরার আকুতি থাকলেও ফেসবুকে পোস্ট ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলেন না তারা। হযরত শাহজালালে নামার পর রেজাউন নাহার নামে চেন্নাইয়ে যাওয়া এক রোগীর মেয়ে বলেন, ২৪ জানুয়ারি চেন্নাইয়ের ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালে যাই। প্রায় দেড়মাস পর চিকিৎসা শেষে আমরা যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই তখন ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। হঠাৎ করেই ভারতজুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শুরু হয় দেশে ফেরার অপেক্ষা। প্রায় কয়েক শ’ বাংলাদেশী আটকে পড়ি। সবাই যে যার মতো চেষ্টা করেও দেশে ফিরতে পারিনি। অবশেষে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা প্রথম দিনেই টিকেট কেটে ফেলি। প্রথমে যখন জানতে পারলাম বিশেষ ফ্লাইট আসছে, দেশে ফিরতে পারব, তখন সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ভিনদেশে আটকে ছিলাম, দেশে ফিরতে পেরে আমরা সত্যি খুব কৃতজ্ঞ, ধন্যবাদ ইউএস-বাংলাকে।’ এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসের অধিক সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসার জন্য আটকে পড়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশী। গত ১৭ মার্চ থেকে আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় কোনভাবেই বাংলাদেশী যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাস আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। বিশেষ ফ্লাইটে তাদের দেশে আনতে সহযোগিতার হাত বাড়ায় ইউএস-বাংলা। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই সরাসরি চেন্নাইয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে তিনটি বিশেষ ফ্লাইটে ৪৯২ জনকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ইউএস-বাংলার ক্রু-পাইলটরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করছেন। এর আগে গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার তিনটি ফ্লাইটে ১৬৪ জন করে মোট ৪৯২ বাংলাদেশীকে দেশে আনে ইউএস-বাংলা। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২১-৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বিমানবন্দরের যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়। এরপর আরও তিন দফায় এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ সময় আরও বাড়তে পারে।
×