ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালবৈশাখী ঝড় বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:১০, ২৫ এপ্রিল ২০২০

  কালবৈশাখী ঝড় বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতে শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শরীয়তপুরে ঘর চাপায় একজন, মৌলভীবাজারে গাছ চাপায় একজন মারা গেছে। অন্য চারজনের মধ্যে বজ্রপাতে ফরিদপুরে মারা গেছে দুজন এবং যশোরের টোগায় কিশোর ও মুন্সীগঞ্জে কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের জাকির খার কান্দি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে চাপায় জহু আকন নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। এছাড়াও একই সময় নড়িয়া পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ২০টি কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরের ওপর গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রাতে প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়ে জহু আকনের বসতঘরে একটি গাছ পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নড়িয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ৪টি বাড়িতে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও একই সময় একই পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ৬টি ঘরবাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। সংবাদ পেয়ে নড়িয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ শহিদুল ইসলাম বাবু রাঢ়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘরের ওপর পড়ে থাকা গাছ কেটে সরানোর ব্যবস্থা করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার আশ^াস দেন তিনি। মৌলভীবাজার ॥ কমলগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বয়ে যাওয়া বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কমলগঞ্জ পৌরসভা, সদর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। কমলগঞ্জ পৌরসভার কার্যালয়ের সামনে ঝড়ের সময় গাছ চাপায় মনির বক্স এক নৈশপ্রহরী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায়। ঝড়ে পৌরসভা সংলগ্ন মকবুল আলী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গাছপালা উপড়ে বৈদ্যুতিক লাইন ল-ভ- হয়ে গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশেকুল হক বলেন, ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষতক্ষতির খবর পেয়েছি। ফরিদপুর ॥ জেলার চরভদ্রাসনে বজ্রপাতে মারা গেছে দুই কৃষক। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গার শেষ মাথা ও পাশের মাথাভাঙ্গা চরে এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই কৃষকই গরু চড়াতে গিয়ে এ বজ্রপাতের শিকার হন। মাথাভাঙ্গার শেষ মাথা নামক স্থানে মারা যান জয়নাল মোল্লা (৩৯) নামে এক কৃষক। তিনি পাশের সদরপুর উপজেলার আকটের চর ইউনিয়নের রেহাই রামনগর গ্রামের কোকারাম সরকারের কান্দি মহল্লার বাসিন্দা খালেক মোল্লার ছেলে। জয়নাল মোল্লা বিবাহিত এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। অপরদিকে একই সময় মাতাভাঙ্গার চরে নিহত হন হাশেম মোল্লা (৬১) নামে এক কৃষক। তিনি চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের সবুল্লা মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের মৃত তনু মোল্লার ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং চার মেয়ের বাবা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা বলেন, ওই দুই কৃষকই গরু চড়াতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ওই দুই পরিবারের সদস্যদের হাতে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। যশোর ॥ চৌগাছায় বজ্রপাতে খলিলুর রহমান (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। সে উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের চান্দা-আফরা গ্রামের শাহিনুর রহমান গাজীর ছেলে। এ ঘটনায় আরও পাঁচ ব্যক্তি আহত হয়েছে। তারা হলেন গ্রামের আতিয়ার রহমান, রোস্তম আলী, কিনু বিশ্বাস, বাবুল ও মুক্তার। এদের মধ্যে গুরুতর আহত আতিয়ার রহমানকে টহলরত সেনা সদস্যদের গাড়িতে করে যশোর সিএমএইচে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আফরা মোড় মাঠের ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকাল থেকে কৃষকরা আফরা মোড়ের মাঠে ধান কাটছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ওই মাঠে থাকা খলিলুর রহমান ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এসময় ওই মাঠে থাকা ২৬/২৭ জন কৃষকের সবাই কমবেশি আহত হয়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ টহলরত সেনা সদস্যদের টিম ওই স্থানে গেলে গুরুতর আহত আতিয়ার রহমানকে সেনা সদস্যদের গাড়িতে করে যশোর সিএমইচে নেয়া হয়। অন্য আহত রোস্তমকে যশোর হাসপাতালে ও কিনু বিশ্বাসকে চৌগাছা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাবুল ও মুক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বজ্রপাতে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ ॥ শ্রীনগরে বজ্রপাতে মোহাম্মদ রোমান (১৭) নামে এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্সীয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত রোমান ওই গ্রামে মোঃ মজনু শেখের পুত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে বৃষ্টির সময় শ্রীনগর সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রোমান নিজ বাড়ির দিকে আসছিল। বাড়ির সামনেই হঠাৎ এক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই রোমানের মৃত্যু হয়। এ সময় তার দেহের অনেকাংশে পুড়ে যায়। রোমানের আকস্মিক এই মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
×