ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেটই ভরসা ঘরবন্দী মানুষের

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 ইন্টারনেটই ভরসা ঘরবন্দী  মানুষের

ফিরোজ মান্না ॥ প্রাণঘাতী করোনায় মানুষের ঘরবন্দী জীবন। ঘরে বসে সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যম এখন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট আর টেলিভিশন দেখা ছাড়া আর তেমন কোন কিছু নেই। কেউ কেউ বই পড়ছেন। আবার কেউ কেউ লেখালিখি করে সময় পার করছেন। তবে ইন্টারনেট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা মানুষ সময় পার করতে বেশি সাহায্য করছে। কিন্তু সেই ইন্টারনেট কি তার গতি ঠিক রাখতে পারছে। ৯ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি গ্রাহকই এখন ঘরবন্দী। তারা ইন্টারনেটের ওপর ভরসা করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ডেটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ঘরে বসে অফিস করছেন। সূত্র জানিয়েছে, করোনার এই সময়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি খাতই বিপদে পড়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার থেকে মুক্ত রাখার জন্য দেশে দেশে সরকার মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মানুষ এখন ঘরবন্দী। এই ঘরবন্দী অবস্থায় অনেক কোম্পানিই কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। একদিকে ভার্চুয়াল অফিসের কাজ ও অন্যদিকে সময় কাটানোর জন্য হলেও ইন্টারনেটের ওপর চাপ বেড়েছে। কেনাকাটার অনেকাংশ এখন অনলাইনে হচ্ছে। আবার ফেসবুক, টুইটারে মানুষের সংযুক্ত থাকার হার বেড়েই চলেছে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও কনটেন্টের ওয়েবসাইটে বাড়ছে ক্লিকও। ইন্টারনেটও তার মধ্যে একটি খাত। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর এ্যাসোসিয়েশন (আইএসপি) ইতোমধ্যে এই খাতে অন্যান্য খাতের মতো প্রণোদন চেয়েছেন। তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং গ্রাহক পর্যায়ে নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার জন্য। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে দেশে দেশে লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এক হিসাবে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি মানুষ এখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। এর বেশির ভাগটাই আবার মোবাইল নেটওয়ার্ক। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেটের হার সবচেয়ে বেশি। ভারত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এখন জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া চলমান। ফলে এসব দেশের মোবাইল ফোনগুলো এখন বিনোদন, যোগাযোগ ও অফিসের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। দেশে মোবাইল অপারেটরদের যে পরিমাণ ‘ক্যাপাসিটি’ তার কয়েক গুণ চাপ বেশি পড়ছে তাদের ‘সিস্টেমের’ ওপর। তারা ভয়েস কলেই ঠিকমতো সেবা দিতে পারছেন না। এর ওপর যোগ হয়েছে ইন্টারনেট। দেশে প্রায় ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে ঘরবন্দী জীবনযাপন করছেন। অবশ্য এ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এ্যামটব) জানিয়েছে, সাধারণ ছুটির মধ্যে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লেও, কথা বলা কমে গেছে। এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এস এম ফরহাদ বলেন, অর্থনীতির অন্যতম শক্তি টেলিকম খাত করোনাভাইরাসের কারণে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। মোবাইল সেবাদাতারা গ্রাহকদের সেবা ব্যবহারের ধরন পর্যবেক্ষণ করে আশঙ্কা করা হচ্ছেÑ এই খাতে সামগ্রিক আয়ের উপর যথেষ্ট চাপ ফেলবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে অপারেটররা ডেটা প্যাকের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেছে। যার ফলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডেটা ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়লেও এ থেকে অপারেটরদের আয় এখনও এত কম যে তা তাদের সার্বিক রাজস্ব আয়ে খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব রাখে না। বিশেষত উদ্বেগজনক হলো যে গত কিছুদিন ধরে ভয়েস কল ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। মোবাইল খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে এমটব এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এমটব সূত্র জানিয়েছে, মানুষদের চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে খুচরা চ্যানেলের মাধ্যমে মোবাইলে টাকা রিচার্জের হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। এই সঙ্কটকালে টেলিকমকে জরুরী পরিষেবা হিসাবে ঘোষণা করা হলেও দেখা যাচ্ছে যে সরকারী নির্দেশাবলীর বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঠিক ধারণা না থাকায় টেলিকমের খুচরা কর্মকা-গুলো বিশেষত টপআপ বা রিচার্জ পরিষেবাদিগুলোর কর্মকা-ে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা আসছে। মোবাইলের স্থানীয় স্টোর এবং অন্যান্য রিচার্জ আউটলেটগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে সে জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারীদের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি আমরা মোবাইল গ্রাহকদের অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা যেমন ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার, মোবাইল মানি কিংবা মোবাইল এ্যাপিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে টকটাইম রিচার্জ করতে উৎসাহিত করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে বলছেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কোম্পানিগুলো কখনোই ইন্টারনেটে খুব কম সময়ের ব্যবধানে গ্রাহকদের এত চাপ দেখা যায়নি। স্পেনের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি টেলিফোনিকার প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এনরিক ব্লাংকো বলছেন, ২০২০ সালের পুরো বছরে কোম্পানি যে ট্রাফিক অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছিল, তা মাত্র দুই দিনে পূরণ হয়ে গেছে। ইন্টারনেটে চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে গত কিছু দিনে। এখন শঙ্কা উঠেছে, করোনাভাইরাসের কারণে পরে আবার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে না তো! সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, পুরো বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা এত বেশি বেশি চাহিদা পূরণের মতো করেই তৈরি করা। বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবস্থা। মোবাইল ইন্টারনেটে সমস্যা কিছুটা হচ্ছে। কারণ, একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী ঢোকার চেষ্টা করছেন, ফলে ট্রাফিক বাড়ছে ও গতি কমছে। আর সামগ্রিক ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ধীর গতি চলে এসেছে, কারণও ওই একই। ব্যবহারকারী প্রচুর। কিন্তু পুরো ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার কোন শঙ্কা নেই।
×