ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোসলেমের ছেলেমেয়েদের ডিএনএ পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 মোসলেমের ছেলেমেয়েদের ডিএনএ  পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

শংকর কুমার দে ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার হওয়া খুনী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিনের ডিএনএ পরীক্ষার পাশাপাশি তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েরও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে খুনীর ছেলে-মেয়েদেরকে। খুনী মোসলেমউদ্দিনের পরিচয় নিশ্চিত না হলে আটক ওই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেয়া যায়, সে কারণেই হস্তান্তরের গোটা বিষয়টি দুই দেশের গোয়েন্দাদের বোঝাপড়ার মধ্যে আটকে আছে। আর এ কারণেই খুনী মোসলেমউদ্দিন গ্রেফতার হয়েছে এটা বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশের কোন দেশই সরকারীভাবে স্বীকার করছে না বলে গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও জেলার ঠাকুরপুকুর এলাকার চাঁদপাড়ায় সত্তরোর্ধ যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে দেখে মনে হয়েছে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খুনী মোসলেমউদ্দিনই। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক মোসলেমউদ্দিনকে শনাক্তের জন্য খবর দিয়ে নেয়া হয় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদেরও। বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের জেরা জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে আটক হওয়া ব্যক্তিটিই খুনী মোসলেমউদ্দিন। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, খুনী মোসলেমউদ্দিনকে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও জেলার ঠাকুরপুুকুর এলাকায় আটকের পর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা। এরপর খবর দিয়ে ডেকে নেয়া হয় বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের জেরার মুখেও আটক ব্যক্তি নিজেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনী বলে স্বীকার করেনি। এতেই দেখা দেয় জটিলতা। এ জন্য খুনী মোসলেমউদ্দিনের পরিচয় নিশ্চিত হতে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোসলেউদ্দিনের ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের জিনের সঙ্গে বৃদ্ধের জিন মিলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুনী মোসলেমউদ্দিনের পরিচয় নিশ্চিত না হলে আটক ওই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেয়া যায়, সে কারণেই হস্তান্তরের গোটা বিষয়টি বোঝাপড়ার মধ্যে আটকে আছে। আর এ কারণেই খুনী মোসলেমউদ্দিন গ্রেফতার হয়েছে এটা দুই দেশের কোন দেশই সরকারীভাবে স্বীকার করছে না। ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম চলতি সপ্তাহে খবর দিয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিনকে কলকাতায় আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, আটক হওয়া ব্যক্তিই রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিন কি না, তা নিশ্চিত হতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। ‘ধৃত বৃদ্ধই কি মুজিব ঘাতক, জিন পরীক্ষা’ এই শিরোনামের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘বাংলাদেশী গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধই শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেউদ্দিন কি না, তা নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। সত্তরোর্ধ এই বৃদ্ধকে রবিবার মধ্যরাতে উত্তর ২৪ পরগনার বেরি গোপালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশী গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয়া হয় বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিন খানের ৫ ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মোসলেমউদ্দিন ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর নরসিংদী জেলার শিবপুরের দত্তেরগাঁও এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল। ’৯৬ সালের আগ পর্যন্ত কোন সরকারই মোসলেমউদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রিসালদার মোসলেমউদ্দিন নিজের নাম-পরিচয় বদলে ফেলার পর তার নতুন নাম রাখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান। নতুন এ নাম যুক্ত করেই তার পরিবারের সব সদস্য জাতীয় পরিচয়পত্র পায়। এমনকি খুনী পিতার নাম বদলে তার সন্তানরা নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে নির্বিঘেœ। দিব্যি ঘুরছেন দেশ-বিদেশেও। মোসলেমউদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু পিতার নাম বদল করা হয়েছে। মোসলেমউদ্দিনের নামের জায়গায় লেখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান। তবে ২০১৮ সালে গোপনে ছদ্মবেশে নরসিংদীর রায়পুরার বাড়িতে এসে গেছে এমন দাবি গোয়েন্দা সংস্থার। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের সময় তার বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশী নিরাপত্তা থাকত। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হলে তার বাড়িসহ বেশকিছু সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। একপর্যায়ে খুনী রিসালদার মোসলেমউদ্দিন পালিয়ে যায়। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই নিরাপদ স্থানে গা ঢাকা দেয়। মোসলেমউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ফের নরসিংদী এলাকায় ফিরে আসে। কিন্তু এবার মোসলেমউদ্দিনের ৫ ছেলে ও এক মেয়ের সবাই কৌশলে পিতার নাম বদলে নিতে সক্ষম হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সরকারী সব ধরনের কাগজপত্রে তাদের পিতার নাম হয়ে যায় রফিকুল ইসলাম খান। নতুন পরিচয়ে তারা সমাজের মূল ধারায় মিশে যায় খুব সহজে। চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে নতুন করে। মোসলেমউদ্দিনের বড় ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান নরসিংদী শহরের টাউন হল মোড়ে হোটেল ব্যবসা করছে। ২য় পুত্র শফিকুল ইসলাম খান চাকরি নেন জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিতে। ৩য় ছেলে মাহমুদুল ইসলাম খান সিনিয়র আরএসম পদে চাকরি পান এ্যালকো ফার্মাসিটিক্যালসে। ৪র্থ পুত্র মজিদুল ইসলাম খান পরিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করে এবং পঞ্চম পুত্র মহিদুল ইসলাম খান নদী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে উঁচু পদে। মোসলেমউদ্দিনের একমাত্র মেয়ে সানাজ খানের বিয়ে হয় নরসিংদীতেই। তার স্বামী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এখন দক্ষিণ কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, খুনী মোসলেমউদ্দিনের ডিএনএ পরীক্ষার পাশাপাশি তার ছেলে ও মেয়েসহ নিকটাত্মীয় স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। মোসলেমউদ্দিনের ডিএনএ পরীক্ষার ফলের সঙ্গে ছেলে, মেয়ে আত্মীয়স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার ফল মিলানো হবে। এ ছাড়াও খুনী মোসলেমউদ্দিনের ছেলে, মেয়ে আত্মীয়স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে আটক হওয়া ব্যক্তি খুনী মোসলেমউদ্দিন। এ জন্য মোসলেমউদ্দিনের আটক হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশের কোন দেশই সরকারীভাবে স্বীকার বা ঘোষণা দিচ্ছে না। এ জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
×