ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি

পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তের সার্ভিস এরিয়ায় আইসোলেশন সেন্টার

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২৫ এপ্রিল ২০২০

  পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তের সার্ভিস এরিয়ায় আইসোলেশন সেন্টার

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ করোনা মোকবেলায় পদ্মা বহু সেতু প্রকল্পও পিছিয়ে নেই। পুরো প্রকল্প আইসোলেটেট রেখে দেশী-বিদেশী কর্মীরা হরদম কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুপ্রান্তের দুই সার্ভিস এরিয়ায় ১২ বেড করে ২৪ বেডের দুটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। মাওয়া প্রান্তের দোগাছিস্থ সার্ভিস এরিয়া-১ এবং ওপারের জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া-২ এ এই আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। শুক্রবার পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রজ্জব আলী জনকণ্ঠকে জানান, দু’পারে আইসোলেশন সেন্টারেই দু’জন করে চিকিৎসক এবং দু’জন করে নার্সসহ প্রয়োজনীয় সব জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে আল্লাহ’র রহমতে এখন কারও এই আইসোলেশনে আসতে হয়নি। কোন কর্মীর ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দিলেই এই আইসোলেশনে সেন্টারে নিয়ে আসা হবে। এর পর সোয়াব পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট পজেটিভ আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে বাকি দুই স্প্যানের বিশাল চালান চীন থেকে রওনা হয়েছে। প্রকৌশলী মোঃ রজ্জব আলী জানান, এছাড়াও পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ইচ্ছা প্রকাশ করলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় একটি করে আইসিইউ বেড স্থাপন করে দেয়া হবে। একটি ভেন্টিলেশন বেড স্থাপনের ব্যাপারেও আগ্রহ রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের। তবে এসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজনে চীন থেকে নিয়ে আসার ব্যাপারেও সহযোগিতা থাকবে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন প্রকল্পে স্থাপিত ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে দুটি এবং জাজিরা প্রান্তে তিনটি এই পাঁচটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসকের নেতৃত্বে অন্য স্বাস্থ্য কর্মীরা ছুটির দিনও পিপিই পরিধান করে পুনর্বাসন প্রকল্পের লোকজন ছাড়াও সকলের জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র উন্মুক্ত রয়েছে। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে যথা সম্ভব প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হচ্ছে। আগে প্রতি মাসে প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০ হাজার টাকার জরুরী ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হতো। এখন প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার জরুরী ওষুধ দেয়া হচ্ছে। করোনা কারণে বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে যেখানে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা বিঘিœত হচ্ছে, আর এখানে স্বাস্থ্য স্বাভাবিক চলছে বলে তিনি জানান। মে’র প্রথম সপ্তাহে ২৯তম স্প্যান পদ্মা সেতুর ২৯তম স্প্যান বসছে মে’র প্রথম সপ্তাহে। ১৯ এবং ২০ নম্বর খুঁটির ওপর বসবে ‘৪এ’ নম্বরের এই স্প্যান। গত ৩০ এপ্রিল স্প্যানটি বসানোর টার্গেট থাকলেও স্প্যানটির চূড়ান্ত রঙের কাজ শেষ না হওয়ায় সিডিউল পরিবর্তন করতে হয়েছে। শুক্রবার নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জনকণ্ঠকে জানান, ‘৪এ’ নম্বর স্প্যানটির ফাইনাল রং হয়ে গেছে। ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি এখন চেক করা হচ্ছে। অর্ধেক চেকও হয়ে গেছে। বাকি অংশ চেক করার পরই ক্লিপ এবং রেলিং লাগিয়ে খুঁটিতে উঠানো উপযোগী হবে। এতে সপ্তাহ খানেক সময় লেগে যাচ্ছে। তাই প্রাথমিকভাবে ৫ মে স্প্যানটি খুঁটিতে উঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও সিডিউল দেয়া হয়নি। তিনি জানান, চীন স্প্যানগুলো থেকে আসা খ- খ- আকারে আসে। এরপর এটি ওয়েল্ডিং করে ফিটিং করা হয়। পরবর্তীতে মেশিনের মাধ্যমে খসামাষা ও পরিষ্কার করে তারপরই ফাইনাল পেন্টিং হয় মৌমনের মাধ্যমে। এসব কাজে প্রায় ২শ’ বাঙালী রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে এখন ইয়ার্ডে আছে প্রায় ১২০ শ্রমিক। বাকিরা ধান কাটা এবং করোনার কারণে এখনও কাজে যোগ দেননি। যার কারণে এই সেক্টরে কাজ একটু বিলম্ব হচ্ছে। স্প্যানের সর্বশেষ চালান ॥ চীন থেকে স্প্যানের বড় একটি চালান রওনা হয়ে গেছে। ২৬ মার্চ এই চালানটি বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে। এরপর কাস্টস্’র ফর্মালেটেস শেষ করে আরও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মাওয়ায় পৌঁছে যাবে। এই চালানটির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা চলছিল। ২৭ মার্চ চালানটি মুদ্র পথে রওনা হয়েছে। সেতুন ৪১টি স্প্যানের ৩৯টি স্প্যানই মাওয়ায় পৌঁছেছে। কিন্তু বাকি থাকা ২টি স্প্যান নিয়েই নানা শঙ্কা তৈরি হয়। কারণ প্রথম চীনে করোনার শুরু হওয়ায় এই স্প্যা দুটি নিয়ে দায়িত্বশীলরা ভাবনায় পড়েন। পরবর্তীতে চীনের করোনা সঙ্কট কেটে যাওয়ার পর স্প্যান দুটির ফিনিশিং কাজ শেষ করে বড় এই চালানটি রওনা হয়। সর্বশেষ স্প্যান দুটি ২৩০ খন্ডে বিভক্ত। এর মধ্যে ২৭ মার্চ রওনা হওয়া বড় চালানটিতে ১৯৩টি খন্ড রয়েছে। বাকি ৩৭টি খন্ড নিয়ে আরেকটি ছোট চালান রওনা হচ্ছে ৫ মে। এটিই স্প্যানের সর্বশেষ চালান। এর মধ্য দিয়েই চীনে তৈরি করা সেতুর স্টিলের তৈরি স্টাকচার (স্প্যান) আসা শেষ হচ্ছে। সেতুর এই স্প্যান তথা স্টাকচারের প্রতিটি ১৫০ মিটার দীর্ঘ। ৪১টি স্প্যানের ২৮টি খুঁটিতে স্থাপনও হয়ে গেছে। এতে সেতুর বড় অংশ অর্থাৎ ৪.২০ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। আগস্টে সব স্প্যান বসানোর চেষ্টা ॥ ২৮তম স্প্যান বসে যাওয়ার পর বাকি থাকল মাত্র ১৩টি স্প্যান। সংশোধিত সিডিউল অনুযায়ী আগামী নবেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান থুঁটিতে বসে যাওয়ার কথা আছে। তবে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা মনে করছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই আগস্টের মধ্যে খুঁটির ওপর সব স্প্যান বসে যাবে। দ্বিতল সেতুর ওপরে থাকবে সড়কপথ আর নিচে থাকবে রেলপথ। যা এখন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী (সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের আরও জানান জানান, পুরো প্রকল্পটিই আইসোলেটেট। তাই এখানকার দেশী-বিদেশী কর্মীরা অনেকটাই নিরাপদ।
×