ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোথাও কোথাও সুষ্ঠু চিকিৎসা মিলছে না

করোনাভাইরাসে বিদেশে মারা গেছেন ৩৭৪ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 করোনাভাইরাসে বিদেশে মারা গেছেন ৩৭৪ বাংলাদেশী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বিদেশে ৩৭৪ জন বাংলাদেশী মারা গেছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যু ঘটেছে ১৯১ জন বাংলাদেশী নাগরিকের। প্রতিদিনই প্রবাসে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের দিক থেকেও বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুরোতে বাংলাদেশী কর্মীদের অবস্থা ভয়াবহ। দেশগুলোতে কর্মীরা একটি ছোট রুমে গাদাগাদি করে থাকার কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশী ডাক্তার মোহসিন জানিয়েছেন, সৌদি সরকার তাদের নাগরিকদের চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা দেয়া তাদের খুব বেশি দায়িত্ব মনে করছে না। এ কারণে বাংলাদেশের আমরা যারা ডাক্তার রয়েছি তারা একটি মোবাইল চিকিৎসা সেবা চালু করেছি। আমরা একটা হটলাইন চালু করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। ডাক্তার মোঃ মহসিন টেলিফোনে জানান, হাসপাতালে কাজ শেষ করে যে সময় আমাদের হাতে থাকে সেই সময়ে পালাক্রমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাসও আমাদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দূতাবাসও এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় মুশকিল হচ্ছে যারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন তাদের বেলায়। কারণ তারা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কারণ তারা অবৈধভাবে দেশটিতে রয়েছেন। যারা বৈধভাবে আছেন তাদের বেলায় চিকিৎসা পাওয়া খুব একটা কঠিন হচ্ছে না। ৭০ জনের একটি চিকিৎসক দল স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা টেলি মেডিসিন সেবা দেয়া হচ্ছে। এই সেবায় বাংলাদেশী বহু কর্মী আক্রান্ত হয়েও ভাল হয়ে গেছেন। মুশকিল হচ্ছে একটা ঘরের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জন করে কর্মী বসবাস করেন। তাদের আইসোলেশনে রাখাটাও কঠিন। এরপর চেষ্টা করা হচ্ছে তারা যাতে আক্রান্ত হওয়ার পর সঙ্গনিরোধ থাকতে পারেন সে জন্য অন্য সহকর্মীরা সহযোগিতা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে এখানে কর্মীদের কোন কাজ না থাকায় কর্মীরা চরম খাদ্য সঙ্কটে রয়েছেন। তাদের খাদ্য সহযোগিতা জরুরী হয়ে পড়েছে। খাদ্যের অভাবে অনেকেই এমনিতেই নানা অসুখে পড়ছেন। দূতাবাসের পক্ষ বর্তমানে কিছু জায়গায় খাদ্য সহযোগিতা দিচ্ছেন। এই সহযোগিতা সব জায়গায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সৌদিতে বর্তমানে জরুরী অবস্থা চলছে। খাদ্য সহযোগিতা বাড়াতে না পারলে ২২ লাখের বেশি কর্মী চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়বেন। যাতে তারা এই সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে হলে খাদ্যের ব্যবস্থা করতেই হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তার ফেরদৌস বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি করোনা চিকিৎসার জন্য একটি ফেসবুক পেইস খুলেছেন। সেখানে করোনা আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে কি করতে হবে তার সব ব্যবস্থা পত্র দেয়া আছে। তাছাড়া তার সঙ্গে কথা বলেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। সূত্র জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মৃত্যু হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, প্রবাসী কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩৭৪ বাংলাদেশউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দিন যত যাচ্ছে মৃত্যুর হার তত বাড়ছে। মৃত্যুর হার কোনভাবেই কমছে না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯১ জন বাংলাদেশী। এই সংখ্যা সরকারী হিসাব মতে। প্রকৃত পক্ষে মৃত্যুর হার আরও অনেক বেশি হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিদেশে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন যুক্তরাজ্যেও। এছাড়া সেখানে আরও কয়েকশ’ বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রবাসী নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় শতাধিক বাংলাদেশী। প্রবাসী বাংলাদেশীর মৃত্যুর সংখ্যা বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশি। দেশ দুটিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপও বেশি। এ কারণে এই দুই দেশেই বেশিসংখ্যক বাংলাদেশীর মৃত্যুহার দিন দিন বাড়ছেই। এছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরর, কানাডায়, ইতালিতে, স্পেনে, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে, লিবিয়ায়, সুইডেনে, গাম্বিয়ায় ও কেনিয়ায় বহু বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রথম বাংলাদেশী প্রবাসীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশী নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কোন বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর মেলেনি।
×