ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের সব ভোগ্যপণ্য

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৫ এপ্রিল ২০২০

  চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের সব ভোগ্যপণ্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের ভোগ্যপণ্য। ইফতার তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন সব ভোগ্যপণ্য যেমন ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুর এখন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে কিনছেন ভোক্তারা। শুক্রবার ভোগ্যপণ্য কেনাকাটা করতে রাজধানীর বাজারগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছিল। আজ শনিবার থেকে প্রথম রোজা শুরু হচ্ছে। আর এ কারণে ভোক্তাদের সবাই ইফতারি পণ্য কেনাকাটা করছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে লকডাউন চলছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তবে রোজা সামনে রেখে বেশিরভাগ মানুষ কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন। কিনে নিয়েছেন নিত্যপণ্যসহ ইফতারি তৈরিতে ব্যবহার এমন সব পণ্য। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে জাত ও মানভেদে ৭৫-৮৫, চিনি ৬৫-৭৫, ভোজ্যতেল পাঁচ লিটারের ক্যান ৪৯০-৫৩০, পেঁয়াজ ৫০-৬০, মসুর ডাল ৯০-১৩০, এবং খেজুর ২৫০-২০০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া শুক্রবার শাক-সবজির মতো ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। চাল, আটার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিসহ গরু ও খাসির মাংসের দাম। মাছ বিক্রি হয়েছে আগের মতো বেশি দামে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না, পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি নেয়া হলে তাদের শাস্তি পেতে হবে। এ কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। জানা গেছে, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রমজানের আগে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে যেসব পণ্য খালাসের জন্য রয়েছে তা দ্রুত ছাড়করণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দর এলাকার ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়া করোনার মধ্যেও সারাদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী নির্বিঘেœ আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র কাজে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এবার তিনগুণ বেশি পণ্য মজুদ রয়েছে। টিসিবি এসব পণ্য ভর্তুকি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম মাঠে রয়েছে। এদিকে ভেজাল খাদ্য বিক্রি বন্ধে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে কাজ করছে। এর পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু রাখা হয়েছে। ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আরও ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। এসব কার্ডধারী সদস্যরা প্রতি কেজি চাল ১০ টাকায় ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে পারবেন। কাওরানবাজারে বাজার করছিলেন তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মজিদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোন জিনিস নেই যে দাম কমেছে। গত কয়েকদিন আগে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও আবার দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ায় সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, রোজা সামনে রেখে শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। প্রতি হালি লেবু ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু, কাঁচা মরিচ, লাউ, পটোলসহ সব ধরনের সবজির দাম বেশি। গরু ও খাসির মাংসের দামও বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি গরু ৫৫০-৬০০, খাসি ৮০০-৮৫০, ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের মাছের দাম আরেক দফা বেড়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে ॥ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেছেন, অহেতুক দাম বেশি রাখা হলে কাউকে ছাড়া হবে না। বাণিজ্য সচিব নিজে মাঠে নেমে বাজার তদারকি করছেন। তিনি জানান, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা কয়েকগুণ বেশি মজুদ রয়েছে দেশে। এ কারণে পণ্যের কোন সঙ্কট হবে না। কেউ সঙ্কট তৈরির পাঁয়তারা করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঈদ সামনে রেখে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি রয়েছে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজারে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এছাড়া ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত, ঈদে নাড়ির টানে নির্বিঘেœ ঘরে ফেরা, মৌসুমি রোগ ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ, কর্মচারীদের যথাসময়ে মজুরি ও ছুটি প্রদান সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালে ১৪টি মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
×