ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের ভোগ্যপণ্য

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৪ এপ্রিল ২০২০

বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের ভোগ্যপণ্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানের ভোগ্যপণ্য। ইফতার তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন সবভোগ্য পণ্য যেমন ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুর এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে কিনছেন ভোক্তারা। শুক্রবার ভোগ্যপণ্য কেনাকাটা করতে রাজধানীর বাজারগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছিল। আজ শনিবার থেকে প্রথম রোজা শুরু হচ্ছে। আর এ কারণে ভোক্তাদের সবাই ইফতারি পণ্য কেনাকাটা করছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে লকডাউন চলছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তবে রোজা সামনে রেখে বেশিরভাগ মানুষ কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন। কিনে নিয়েছেন নিত্যপণ্যসহ ইফতারি তৈরিতে ব্যবহার এমন সব পণ্য। বাজারে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে জাত ও মানভেদে ৭৫-৮৫, চিনি ৬৫-৭৫, ভোজ্যতেল পাঁচ লিটারের ক্যান ৪৯০-৫৩০, পেঁয়াজ ৫০-৬০, মশুর ডাল ৯০-১৩০, এবং খেজুর ২৫০-২০০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া শুক্রবার শাক-সবজির মতো ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। চাল, আটার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিসহ গরু ও খাসির মাংসের দাম। মাছ বিক্রি হয়েছে আগের মতো বেশি দামে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না, পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি নেয়া হলে তাদের শাস্তি পেতে হবে। এ কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। জানা গেছেম, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রমজানের আগে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে যেসব পণ্য খালাসের জন্য রয়েছে তা দ্রুত ছাড়করণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দর এলাকার ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়া করোনার মধ্যেও সারাদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী নির্বিঘেœ আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র কাজে অন্যযেকোন সময়ের চেয়ে এবার তিনগুন বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। টিসিবি এসব পণ্য ভর্তুকি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়া ভেজালখাদ্য বিক্রি বন্ধে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে কাজ করছে। এর পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়েল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু রাখা হয়েছে। ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আরও ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। এসব কার্ডধারী সদস্যরা প্রতিকেজি চাল ১০ টাকায় ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে পারবেন। কাওরান বাজারে বাজার করছিলেন তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মজিদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোন জিনিস নেই যে দাম কমেছে। গত কয়েকদিন আগে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও আবার দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ায় সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। এদিকে, রোজা সামনে রেখে শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। প্রতিহালী লেবু ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু, কাঁচা মরিচ, লাউ, পটলসহ সব ধরনের সবজির দাম বেশি। গরু ও খাসির মাংসের দামও বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি গরু ৫৫০-৬০০, খাসি ৮০০-৮৫০, ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের মাছের দাম আরেকদফা বেড়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে ॥ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেছেন, অহেতুক দাম বেশি রাখা হলে কাউকে ছাড়া হবে না। বাণিজ্য সচিব নিজে মাঠে নেমে বাজার তদারিক করছেন। তিনি জানান, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা কয়েকগুন বেশি মজুদ রয়েছে দেশে। এ কারণে পণ্যের কোন সঙ্কট হবে না। কেউ সঙ্কট তৈরির পায়তারা করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এদিকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঈদ সামনে রেখে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি রয়েছে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজারে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এছাড়া ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত, ঈদে নাড়ির টানে নির্বিঘেœ ঘরে ফেরা, মৌসুমী রোগ ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ, কর্মচারীদের যথাসময়ে মজুরি ও ছুটি প্রদান সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালে ১৪টি মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। জানা গেছে, এবারের আসন্ন রমজানে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে রমজানে জনপ্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টির উপর। এলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিত্যপণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের বিষয়টির দায়িত্বে থাকবে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান ও ঈদ সামনে রেখে সরকারের বেশকিছু প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষ করে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম যাতে ওই সময় না বাড়ে সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজরদারি রাখা হবে। তিনি বলেন, রমজানের সময় ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন সবপণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল এবং খেজুরের আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারীখাতের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যেনো এসব পণ্যের আমদানি ও মজুদ বাড়ায়। যাতে ওই সময় দেশের মানুষ এসব পণ্য ন্যায্যদামে কিনতে পারেন। এর পাশাপাশি সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ডাল ও ছোলার মতো পণ্য বিক্রি করা হবে।
×