ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট ॥ অভিষেকেই আলো ছড়িয়ে ছিলেন মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৫ এপ্রিল ২০২০

আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট ॥ অভিষেকেই আলো ছড়িয়ে ছিলেন মুস্তাফিজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়টি ছিল ক্রিকেটবোদ্ধাদের চোখে অঘটন। কারণ, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ফেবারিটদের তালিকায় ছিল পাকরা আর বাংলাদেশ দল আন্ডারডগ হিসেবে সবেমাত্র প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছে। সেটি যে অঘটন ছিল তার প্রমাণ পরবর্তী ১৬ বছরে পাওয়া গেছে। আর দ্বিতীয় জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে ২৫ ওয়ানডে, ৮ টেস্ট ও ৭ টি২০ পাকিস্তানের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে ২০১৫ সালের এপ্রিল ছিল সত্যিই বাংলাদেশ দলের জন্য পয়মন্ত। ওয়ানডে সিরিজে পাকদের একেবারে হোয়াইটওয়াশ করে ১৬ বছরের আক্ষেপ খুব ভালভাবেই মিটিয়ে নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। এরপর একমাত্র টি২০ ম্যাচেও পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দেয় টাইগাররা। সেদিন ছিল ২৪ এপ্রিল, ভেন্যু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। টি২০ ফরমেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার এ জয় ছিল টানা ৭ হারের পর। সাকিব আল হাসানের ৪১ বলে ৫৭ ও সাব্বির রহমানের ৩২ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস দুটি বড় অবদান রাখে। তবে বল হাতে জাদু দেখান একেবারেই অপরিচিত এক মুখ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। আর এভাবেই সেদিনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট পায় পেস বোলিংয়ে ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। ওয়ানডে সিরিজে ‘বাংলাওয়াশ’ হয়ে যাওয়ার পর লজ্জার মধ্যে পড়ে যাওয়া পাকিস্তান দলের জন্য স্বস্তিতে ফেরার উপায় ছিল একমাত্র টি২০ ম্যাচে দারুণ কিছু করে সব ভুলে যাওয়ার। আজকের এই দিনে তারা মিরপুরে ক্ষদ্রতম ফরমেটের একমাত্র ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক বাংলাদেশের। এ ম্যাচে উভয় দলেই দু’জন নতুন ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটে। বাংলাদেশের হয়ে বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার ও আনকোরা, অপরিচিত আর নির্বাচকদের চমক বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজের অভিষেক হয়। সৌম্য বেশকিছু ওয়ানডে জাতীয় দলের হয়ে খেললেও, বাঁহাতি মুস্তাফিজ উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচই খেলেননি। সবেমাত্র আগের বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর কয়েক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অপরদিকে, পাকিস্তানের হয়ে টি২০ অভিষেক ঘটে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মুখতার আহমেদের। টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন পাক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারের মধ্যেই ম্যাজিক দেখান মুস্তাফিজ ও সাকিব। মুস্তাফিজ ২ ওভার ৫, সাকিব ২ ওভারে ২ রান দেন মাত্র। একাদশ ওভারে আবার আক্রমণে এসেই ভয়ঙ্কর আফ্রিদিকে (৯ বলে ১২) সাজঘরে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট নেন মুস্তাফিজ। যদিও সেই ওভারে ১১ রান খরচা করেন তিনি। ১৮তম ওভারে নিজের স্পেলের শেষ ওভারে ফিজ তুলে নেন মোহাম্মদ হাফিজকেও (১৮ বলে ২৬)। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে নিজের আগমণবার্তা বিশ^ ক্রিকেটকে জানিয়ে দেন তিনি। সাকিব উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে মাত্র ১৪১ রান তোলে পাকরা। ওপেনার মুখতার ৩০ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৩৭ এবং হারিস সোহেল ২৪ বলে ১ ছক্কায় অপরাজিত ৩০ রান করেন। জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারেই ঝড় তুলেছিলেন তামিম ইকবাল, হাফিজকে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৪ রান তুলে নেন। কিন্তু পঞ্চম বলে দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে যান অভিষিক্ত সৌম্য শূন্য রানেই। কোন বলই খেলার সুযোগ হয়নি তার। তৃতীয় ওভারে তামিমও (১০ বলে ১৪) সাজঘরে ফিরলে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারে বিদায় নেন মুশফিকুর রহীমও (১৫ বলে ১৯)। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৪ রান আসলেও ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর আর পাক বোলারদের কোন সুযোগই দেননি সাকিব-সাব্বির। দু’জন অবিচ্ছিন্ন থেকে চতুর্থ উইকেটে ১০৫ রান তোলেন। এখন পর্যন্ত সেটিই বাংলাদেশ দলের টি২০ ক্রিকেটে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড। দু’জনই অর্ধশতক পেয়ে অপরাজিত থাকেন। মাত্র ১৬.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৩ রান তুলে ৭ উইকেটের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ৭ টি২০ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই পাকদের কাছে হেরে গিয়েছিল টাইগাররা, এবার টি২০ সিরিজও জিতে নেয় একমাত্র এই জয়ে। এই ম্যাচ থেকে টি২০ ফরমেটেও পাকদের হারিয়ে দেয়ার স্বস্তি যেমন আসে, তেমনি দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আবিষ্কৃত হন মুস্তাফিজ। সে বছর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাজেহাল করে তিনি ‘দ্য ফিজ’ ও ‘কাটার মাস্টার’ উপাধি পেয়ে যান। বিশ্বব্যাপী সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এ বাঁহাতি পেসারের।
×