ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পবিত্র রমজান

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৫ এপ্রিল ২০২০

পবিত্র রমজান

পবিত্র রমজান এবার এসেছে এমন এক সময়ে যখন করোনায় সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি আক্রান্ত বাংলাদেশও। সারাদেশে বর্তমানে চলছে লকডাউন। সর্বত্র প্রায় অচলাবস্থা মানুষের চলাচলে, যাতায়াত তো দূরের কথা, এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানোই দুষ্কর ও দুঃসাধ্য। করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় সঙ্গনিরোধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সে অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় আচার-আচরণসহ বিধিবদ্ধ নিয়মে সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও কিছু নির্দেশনা রয়েছে। যেমন- মসজিদে গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে নামাজ না পড়ে ঘরে বসে পড়া; জানাজায় যথাসম্ভব কম যাওয়া ইত্যাদি। বিধিনিষেধ এসেছে পবিত্র রমজানে তারাবিসহ ঈদের জামাতে নামাজ পড়া নিয়েও। সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও পবিত্র রমজানে বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ও এ সম্পর্কে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সচেতন হতে বলেছেন সর্বসাধারণের মঙ্গল ও কল্যাণের নিমিত্তে। মানবজাতির জন্য রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আবারও ফিরে এলো পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার।’ পরিশুদ্ধতা, খোদাভীতি অর্জন, ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাস এই মাহে রমজান। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে এ মাসেই। তাই সবদিক থেকে মুসলমানদের কাছে মাসটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। রোজা মানুষকে আত্মশুদ্ধি, পবিত্রতা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। সৎ, সুন্দর ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে জীবনযাপনের জন্য রোজার মাস হচ্ছে অনুশীলনের। এ মাসে মুসলমানগণ তাদের দেহ ও আত্মা পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পান। তাই এ মাসের শিক্ষা বছরের বাকি সময়ে কাজে লাগাতে হবে। দীর্ঘ এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, ভোগবিলাস, অন্যায় ও অসৎ কর্ম হতে বিরত থেকে মুমিনগণ রোজা পালন করে আত্মশুদ্ধি ও কৃচ্ছ্র সাধনে ব্রতী হন। কেবল পানাহার ও ভোগবিলাস থেকেই বিরত থাকা সিয়ামের শর্ত নয়, প্রকৃত সিয়াম সাধনা হচ্ছে সকল প্রকার পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম থেকে বিরত থাকা। এ শিক্ষা শুধু রোজার মাসের জন্যই নয়, বছরব্যাপী রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। সিয়ামের মাধ্যমে আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে রোজার মূল চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। রোজা সংযমের বার্তা নিয়ে এলেও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী এ সময় হয়ে ওঠে অসংযমী, বেপরোয়া। অনেক ক্ষেত্রে কোন কারণ ছাড়াই তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন কোন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা যেন এই মাসের জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। এটা রমজানের পবিত্রতা ও শিক্ষার পরিপন্থী। রমজানে বিশেষ করে রাজধানীতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। অবশ্য এবার লকডাউন অব্যাহত থাকলে তার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে মেট্রোরেলের কারণে এই সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। অবশ্য যানজট কমাতে সরকার নানা ব্যবস্থাও নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে জনগণ স্বস্তি পাবে। তারাবির নামাজের সময়ও যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত থাকে, সেটিও নিশ্চিত করা জরুরী। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার রোজায় দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলো সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, এই প্রত্যাশা সবার। আশার কথা এই যে, দেশে এবার অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করায় ধান-চালের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মজুদ পর্যাপ্ত। আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম কম। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে কয়েক দফা নির্দেশনাসহ সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। টিসিবির মাধ্যমেও বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য। সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় যে, গ্রীষ্মের গরম সত্ত্বেও রমজান হবে সহনশীল ও ইতিবাচক।
×