ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে ভিড়ও বেশি, দামও বেশি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৪ এপ্রিল ২০২০

বাজারে ভিড়ও বেশি, দামও বেশি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ রমজানকে কেন্দ্র করে করোনার আতঙ্ক থাকলেও বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দামও। সাধারণত রোজার সময়ে মানুষের একটু বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রবণতাও থাকে। এবার করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি রয়েছে। আর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। ফলে শুক্রবার মানুষ বেড়িয়ে পরে বিভিন্ন নিত্যপণ্য কেনার জন্য। ক্রেতারা জানান, করোনার আতঙ্ক, ভয় থাকলেও বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দরকার। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা কম হলেও এদিন তুলনামূলক ভিড় ছিল একটু বেশিই। জনগণকে নিত্যপণ্য বিশেষ করে ইফতার সামগ্রী বেশি পরিমাণে কিনতে দেখা গেছে। তাই বাড়তি চাহিদা থাকায় বেশ বেড়েছে ইফতার সামগ্রীসহ মুরগি ও সবজির দাম। প্রতি হালি লেবুর দাম উঠেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। ডিম ও গরুর মাংস আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজার, ট্যানারি মোড় কাঁচাবাজার, রায়েরবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রোজা শুরু হচ্ছে তাই পরিবারের জন্য শান্তিনগর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা আলিমুদ্দিন। তিনি বলেন, গত ১৫ দিন আগে বাজার করতে বের হয়েছিলাম। আজ রোজা উপলক্ষে একটু বেশি কিনে নিচ্ছি যেন প্রতিদিন বের হতে না হয়। তিনি বলেন, যে পণ্য পচনশীল নয় সেসব পণ্য একটু বেশি করে কিনে রাখছি। খেয়েও তো বাঁচতে হবে মনে ভয় থাকলেও কখনো কখনো উপায় থাকেনা। কারওয়ান বাজারে অসলাম হোসেন নামের ক্রেতা বলেন, এখানে প্রতিদিনই মানুষ আসে। তবে এটা ঠিক হয়তো রোজার কারণে বাজারে মানুষ বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনার মধ্যেও গত কয়েকদিন সবজিসহ অন্য পণ্যে দাম বেশ কম ছিল। গত এক সপ্তাহ থেকেই কিছু কিছু পণ্যে দাম বাড়তির দিকে। আজকেও মুরগি, ডালসহ সবজির দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় দানার মসুরের ডাল গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার এ ডাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহে যা ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডাল আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়; গত সপ্তাহে যা ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। এছাড়া ছোট দানার মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়; গত সপ্তাহে যা ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। তবে মুগ ডাল আগের দামেই তথা ১৩০ থেকে ১৪৮ টাকায় এবং অ্যাংকর ডাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ৫০ থেক ৬০ টাকা। আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার চিনের আদা প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এছাড়া দেশি আদা ২৩০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এসব পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, চায়না আদার চাহিদা বেশি। কিন্তু বাজারে এর সরবরাহ কম তাই দামও বেশি। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে এনে তারা বেশি দামেই বিক্রি করছেন। এদিকে গত সপ্তাহের আকারভেদে প্রতি হালি ১৫ থেকে ২৫ টাকার লেবু শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। ২০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। ২০ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি শসার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪৮ টাকা। ২০-৩০ টাকার বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। গত কয়েক সপ্তাহের মতো এখনো বাজারে সব থেকে দামি সবজি সজনে ডাটা। বাজারভেদে সজনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে কোথাও কোথাও ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছিল। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে পাকা টমেটোও। গত সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। রোজার আগে বেশকিছু সবজির দাম বাড়লেও করলা, পেঁপে, বরবটি, ঝিঙা, চিচিংগার দাম আগের মতোই স্থির রয়েছে। বাজার ও মানভেদে করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। এছাড়া পটল ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০-৫০ টাকা এবং চিচিংগা ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলেন, কাঁচাবাজারের দাম প্রতিদিনই ওঠা-নামা করে। তবে এসব কিছুদিন থেকেই সবজির দাম তুলনামূলক অনেক অনেক। আজকে চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বাড়তি। এদিকে সবজির পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১২০-১৩০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। মুরগির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম এবং গরু ও খাসির মাংসের দাম। ডিমের ডজন আগের মতোই ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা।
×