ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী নিদের্শনা মেনে চলুন, ঘরে থাকুন ॥ আঁখি

প্রকাশিত: ০২:০৫, ২৪ এপ্রিল ২০২০

সরকারী নিদের্শনা মেনে চলুন, ঘরে থাকুন ॥ আঁখি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাবা সাবেক তাঁতী আক্তার হোসেন। মা গৃহিণী নাছিমা বেগম। বড় ভাই নাজমুল ইসলাম। ছোট্ট টিনের ঘরে বসবাস পরিবারটির। প্রায়ই অসুস্থ থাকেন বাবা। অভাবের সংসার চালাতে হয় মা-বাবার আরেক সন্তান, তাদের একমাত্র কন্যা আঁখি খাতুনকেই। জাতীয় তারকা ফুটবলার তিনি। ফুটবল খেলে যে ১৬-১৭ লাখ টাকা আয় করেছেন, তা দিয়ে ব্যাংকে এফডিআর করেছেন। তাই দিয়েই চলে সংসার। ২০১৭ সাফ অ-১৫ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় গোল্ডেন বুটজয়ী আঁখির পরিবারকে ৫ শতক জায়গা বরাদ্দ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রতি জমি পাননি আঁখির পরিবার। এ নিয়ে সিরাজগঞ্জের এমপি হাসিবুর রহমানকে জানালেও কোন কাজ হয়নি! আঁখির উত্থান ২০১৪ সালে, বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল থেকে (পাড়গোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়)। ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে (অ-১৪) ডাক আসে। এরপর প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলে খেলেন। খেলেছেন সিনিয়র জাতীয় দলেও। করোনা-ক্রান্তিকালে দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ। ফলে ঘরে বসে বেকার হয়ে পড়েছেন আঁখি। মহিলা ফুটবল লিগ যেদিন বন্ধ হয় (১৮ মার্চ), সেদিনই গ্রামের বাড়িতে (সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাড়গোলা) চলে আসেন তিনি। বাড়িতে এসে ফিটনেস ধরে রাখতে প্রতিদিন ফজর নামাজ পড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে ১০ মিনিট ধরে জগিং ও এরপর বাসায় এসে কোর (এক ধরনের ব্যায়াম) করেন। এছাড়া ভাইয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে বল দিয়ে অনুশীলন করেন। একমাত্র জগিং করতে যাওয়া বাদে বাড়ির বাইরে বেরই হন না সেন্টার ব্যাক আঁখি। ঘরে থাকার সময় দিনে ৮-৯ বার করে সাবান দিয়ে হাত ধোন। অবসর কাটে মাকে রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করে, লুডু খেলে ও গল্পের বই পড়ে। প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীরাই করোনার বিস্তারের জন্য দায়ী বলে মনে করেন আঁখি। ‘হোম কোয়ারিন্টিন মানায় তারা একদমই সচেতন ছিল না। তাছাড়া ১০ দিনের সরকারী ছুটি পেয়ে যারা পাগলের মতো গ্রামের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গিয়েছিল, তারাও কম দায়ী নয়।’ দেশ এখন অঘোষিত লকডাউনে। এতে খাদ্যসংকটে পড়েছেন গরীব ও নিন্ম আয়ের মানুষরা। তাদের বাঁচানো প্রসঙ্গে আঁখির ভাষ্য, ‘সরকার তো সাহায্য করছেই। তবে তাদের এই সাহায্য যাদের মাধ্যমে পৌঁছায় সেই জনপ্রতিনিধিরাই আবার চাল-তেল চুরি করে তা আত্মসাৎ করছেন। এতে অসহায়রা বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন হলে তো সমস্যাা। মধ্যবিত্তরাও অনেক সমস্যায় আছে। কারণ তারা লজ্জায় কারো কাছে কিছু চাইতে পারে না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবিনা খাতুন ও জেরার্ড পিকের ভক্ত আঁখি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হলেই রোগী মারা যাবে, এমনটা নয়। কিন্তু চিকিৎসা পাবার অধিকার সবারই আছে। কাজেই ডাক্তারদের মানসিকতার উন্নতি ঘটিয়ে রোগীকে সেবা দিতে হবে।’ সবশেষে আঁখি জনকন্ঠর পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সরকারী নিদের্শনা মেনে চলুন। ঘরে থাকুন।’
×