ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ঘরবন্দী সময়ে গান কবিতায় ক্ষ্যাপার অনলাইন আড্ডা

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৪ এপ্রিল ২০২০

ঘরবন্দী সময়ে গান কবিতায় ক্ষ্যাপার অনলাইন আড্ডা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার দেয়ালের মাঝে বন্দী এখন জীবন। প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা থেকে বাঁচতে হলে চাই বিচ্ছিন্নতা। স্বভাবতই সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় বাকি সবকিছুর মতোই থমকে গেছে উৎসব-আনুষ্ঠানিকতা। নিজেকে সুরক্ষা করার সেই সঙ্গনিরোধে জনসমাগম ঘটে- এমন অনুষ্ঠান করা অসম্ভব। আর এমন ঘরবন্দী সময়ে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপা। দুঃসময়ে মানুষকে বিনোদিত করতে ভার্চুয়াল দুনিয়াকে বেছে নিয়েছে ক্ষ্যাপা। সেই সুবাদে গত ৮ এপ্রিল থেকে নিয়মিত অনলাইনে চলছে তাদের অনুষ্ঠান। উদ্যাপিত হয়েছে বাঙালীর শিকড়ের উৎসব পয়েলা বৈশাখ ও চৈত্রসংক্রান্তি। মঞ্চনাটকের শিল্পী থেকে শুরু করে সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পীসহ শিল্পের নানা ভুবনের মানুষ যুক্ত হয়েছেন এই প্ল্যাটফর্মে। দেশের শিল্পীদের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আগরতলার শিল্পীরাও ক্ষ্যাপার অন্তর্জালে নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করছেন। শিল্পীরা নিজেদের পরিকল্পিত উপস্থাপনার পাশাপাশি সাড়া দিচ্ছেন শ্রোতা-দর্শকের অনুরোধে। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনে মানুষদের কাছেও জনপ্রিয় হয়েছে এই ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান। যঃঃঢ়ং:// িি.ি ভধপবনড়ড়শ. পড়স/কযবঢ়ধ এই পাতায় প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় চলছে গান, কবিতা ও আড্ডা। অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি আয়োজকদের পক্ষ থেকে করোনার প্রভাবে আর্থিক সঙ্কটে পড়া শিল্পীদেরও সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা এবং রাত সাড়ে দশটায় দুই দফায় ক্ষ্যাপার অনলাইনে পরিবেশিত হয় দুটো অনুষ্ঠান। প্রথম পরিবেশনায় ছিল কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। একগুচ্ছ কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতি থেকে সমকালীন বিষয়নির্ভর আড্ডায় হাজির হন ভারতের আগরতলা রাজ্যের বাচিকশিল্পী শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় পর্বে গান ও আড্ডাকে সঙ্গী করে উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার শিক্ষক, নাট্যনির্দেশক ও গবেষক সাইদুর রহমান লিপন। ফেসবুকে লাইভ। আয়োজনটি প্রসঙ্গে ক্ষ্যাপার সম্পাদক পাভেল রহমান জনকনণ্ঠকে বলেন, শুরুতে আমরা হোম থিয়েটার কনসেপ্টে পরিবেশনা উপস্থাপনের উদ্যোগ নেই। কিন্তু অনেক নাট্যকমী আলাপে জানান যে, ঘরে বসে অভিনয় করে দর্শককে মঞ্চনাটকের স্বাদ দেয়া সম্ভব নয়। তখন আমরা মঞ্চনাটকের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশনার সঙ্গে আড্ডাকে যুক্ত করে সাজাই অনুষ্ঠান। মূলত অবরুদ্ধ এই সময়ে মানুষকে নির্র্মল আনন্দ দিতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরাও স্বস্তি অনুভব করছেন। ঘরে বসেই পারফর্ম করার মাধ্যমে তারাও সুন্দর সময় পার করছেন। এছাড়া সংস্কৃতিকর্মী থেকে সাধারণ দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে অনুষ্ঠানটি। বিষয়টিতে আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি। এত সাড়া পাবো ভাবিনি। মানুষ আসলে ঘরবন্দী সময়ে মুক্তির জায়গা খুঁজছে। সেই তাগিদ থেকে আমরাও কিছু করার চেষ্টা করছি। গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি দর্শক দেখছেন আমাদের অনুষ্ঠান। ইতোমধ্যে এক লাখের বেশিত মানুষ উপভোগ করেছেন অন্তর্জালনির্ভর এ আয়োজন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিয়ে দর্শকের অনেক ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো বাজে মন্তব্য আসেনি। এ কারণেই শিল্পীরাও স্বেচ্ছায় এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশের পাশাপাশি ভারতের শিল্পীরাও রয়েছেন এই তালিকায়। বিনোদনের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করছি। দুটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে সামান্য হলেও কিছু মানুষের উপকার হবে। বৃহস্পতিবারও একজন প্রচ্ছদশিল্পী জানালো যে তার কাছে এখন চাল কেনার টাকা নেই। তৎক্ষণাৎ আমরা তহবিল থেকে সাহায্য শিল্পীকে করেছি। পরবর্তীতে থিয়েটারকর্মীদের মধ্যে যারা খারাপ অবস্থায় আছেন তাদের সহযোগিতা করব। সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্পীর ব্যক্তিগত মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় কারো নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। গত ৮ এপ্রিল ক্ষ্যাপার প্রথম আড্ডায় আসেন ঢাকা থিয়েটারের নাট্যশিল্পী সামিউন জাহান দোলা। পাপেট শো, আবৃত্তি ও আড্ডায় সাজানো ছিল চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ নববর্ষের অনুষ্ঠানটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। এদিন পাঁচটি ফেসবুক লাইভ প্রচার করে ক্ষ্যাপা। আবৃত্তি, পাপেট শোর সঙ্গে ছিল নাট্যদম্পতিদের প্রাণবন্ত আড্ডা। অংশ নেন দেশের নাট্যাঙ্গনের আলোচিত দম্পতি রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও শিমূল ইউসুফ। এছাড়া বিভিন্ন দিনে গান-কবিতা, অভিনয় ও আড্ডায় ভালোলাগার অনুভব ছড়িয়েছেন রাহুল আনন্দ, কনক আদিত্য, হাসান আরিফ, সাজু খাদেম, মাসুম রেজা, নাজনীন হাসান চুমকি, রিনি বিশ্বাস, দ্বীপান্বিতা আচার্যসহ দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পী। ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত রমজান মাসে প্রতিদি নরাত ১০টায় এই লাইভ আড্ডা সম্প্রচার হবে বলে জানান ক্ষ্যাপার সহকারী সম্পাদক অপু মেহেদী। পাশাপাশি চালু থাকবে ক্ষ্যাপার সহায়তা তহবিল। এখানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে যে যার সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে পারবেন। তহবিলে সহযোগিতা পাঠানো যাবে ০১৭১৭৩৮৬৬৪৬ এই বিকাশ নম্বরে। অথবা এক্সিম ব্যাংকে ক্ষ্যাপার ০১৪১১১০০৩০৬৩১৩ এই এ্যাকাউন্টেও সহায়তা পাঠানো যাবে।
×