ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে মৃত্যু ১ লাখ ৮৯ হাজার, আক্রান্ত ২৭ লাখ

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৪ এপ্রিল ২০২০

 বিশ্বে মৃত্যু ১ লাখ ৮৯ হাজার, আক্রান্ত ২৭ লাখ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়ায় ধীরে ধীরে কমে আসছে করোনা সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই দেশটিতে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশিই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন মালয়েশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন। বৃহস্পতিবার আসিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ তথ্য জানান। এদিকে ব্রিটেনে করোনা প্রতিরোধে যেসব সামাজিক বিধিনিষেধ রয়েছে, চলতি বছরের পুরোটা সময়ই সেসব মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি। এছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছেন। সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৮০২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন সাত লাখ ৩৯ হাজার ৮৭১ জন। খবর বিবিসি, সিএনএন, মালয়েশিয়ান টাইমস, আলজাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি ও রয়টার্সের। এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৩২ জন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৫২ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের হার মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। আসিয়ান বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাসখানেক আগে গত ২৬ মার্চ আমরা একদিনে ২৩৫ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। যা মালয়েশিয়ায় সর্বোচ্চ রেকর্ড। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, গত পাঁচদিন ধরে আমাদের নতুন রোগী শনাক্ত দুই অংকের ঘরে রয়েছে। আমি স্বীকার করছি, এই সংখ্যাগুলো আশাব্যঞ্জক। তবে বিজয়ের পুরো মর্ম শুধু এই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাবে না। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারাবি ও ইফতারে নিষেধাজ্ঞা ॥ করোনা মহামারীর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় আসন্ন রমজানে দেশটির সব মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশটির ওয়াকফ বোর্ড মঙ্গলবার ওই নির্দেশনা দেয়। পুরো রমজান মাস এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের পরিচালক এ বি এম আশরাফ স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মসজিদে জুমা, তারাবিসহ কোন ধরনের জামাতে নামাজ আদায় করা যাবে না। ইফতার মাহফিলের মতো কোন জনসমাগম করা যাবে না। মসজিদে বা এর প্রাঙ্গণে কোন ধরনের খাবার বিতরণ করা যাবে না। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের দেয়ার নির্দেশনা মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় ৩২১ জন নতুন এই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। বছরজুড়েই থাকবে বিধিনিষেধ ॥ ব্রিটিশ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেছেন, শিগগিরই হঠাৎ জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, এ ধরনের প্রত্যাশা একেবারে অবাস্তব। দীর্ঘ মেয়াদে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার আদর্শ হবে উপায় হবে রোগটি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর কোন প্রতিষেধক বা ওষুধ উদ্ভাবন করা। আগামী বছরের আগে এটি হওয়ার সম্ভাবনা ‘অত্যন্ত ক্ষীণ’ বলে সতর্ক করেন তিনি। ব্রিটিশ সরকারের করোনা বিষয়ক দৈনিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এ রোগটি দূর হতে যাচ্ছে না, অদৃশ্যও হচ্ছে না। আমাদের মেনে নিতে হবে যে, আমরা একটি রোগ নিয়ে কাজ করছি, বিশ্বজুড়ে নিকট ভবিষ্যতে এটির সঙ্গেই আমরা থাকতে যাচ্ছি। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৮। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ হাজার ১৫১ জন। অধ্যাপক হুইটি বলেন, হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যু দূর হয়ে যাবে, জনগণের এমন প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে এর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি আদর্শ পথই খোলা আছে। হয় একটি প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে অথবা অত্যন্ত কার্যকর কোন ওষুধ তৈরি হবে যা সংক্রমিত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম। যেহেতু খুব জলদি প্রতিষেধক বা ওষুধ উদ্ভাবিত হতে যাচ্ছে না, তাই সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি বছরব্যাপী মেনে চলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে আরও ২৮১৭ মৃত্যু ॥ একটানা অনেকদিন ধরে শীর্ষ পর্যায়েই আছে করোনার প্রকোপ। সরকারি হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এ ভাইরাসে নতুন করে আরও দুই হাজার ৮১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় জন হপকিন্সের মতে, স্থানীয় সময় বুধবার পর্যন্ত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৬ হাজার ৫৮৩। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৪৪ লাখ ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯২ জনেরও বেশি মানুষের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৪ হাজার ৫০ জন। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৪ হাজার ১৬ জন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্পেনে আরও ৪৪০ মৃত্যু ॥ গত কয়েক সপ্তাহে করোনা মহামারীতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় ইউরোপে সবার শীর্ষে তারা। এ অঞ্চলে মৃত্যুতে ইতালি শীর্ষে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই স্পেনও। ইতোমধ্যেই দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২২ হাজার ১৫৭ পেরিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৪৪০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর আগের দিন সেখানে ৪৩৫ জন মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে একদিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যেখানে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৮৯ জন। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৯ হাজার ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার রোধে জরুরী অবস্থঅ আরও বাড়িয়েছে দেশটি। আগামী ৯ মে পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকবে। সে পর্যন্ত লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে প্রায় আট সপ্তাহ ধরে স্পেনের লোকজনকে অবরুদ্ধ থাকতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে আরও ১০৩৭ আক্রান্ত ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে দেশটিতে আরও ১ হাজার ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ১৭৮। নতুন করে আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন ডরমিটরিতে বসবাসরত অভিবাসী শ্রমিক। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২ জন। তবে এর মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৮৯৬ জন। করোনা প্রতিরোধের পদক্ষেপ হিসেবে দেশজুড়ে জারি লকডাউনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। করোনা মোকাবিলায় লকডাউন আগামী ১ জুন পর্যন্ত জারি থাকবে। লকডাউনের আওতায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ভারতে আরও ৪৯ মৃত্যু ॥ মহামারী করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে একদিনে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫০ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা যান। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৮১ জন। সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৭৯৭ জন। ভারতে করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মহারাষ্ট্র রাজ্যে। সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই মহারাষ্ট্রের রাজধানী। মহারাষ্ট্রের পর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গুজরাট। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী দিল্লী। জার্মানিতে ২১৫ মৃত্যু ॥ প্রাণঘাতী করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ২ হাজার ৩৫২ জন। দেশটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬। দেশটিতে নতুন করে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে আরও ২১৫ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৫ হাজার ৩১৯ জন। গত তিন ধরে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৪৮। অপরদিকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩১৯ জনের। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে এক লাখ তিন হাজার তিন শ’ জন। ২ হাজার ৯০৮ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। তারা এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২২৯ জন। ইতালিতে ৪৩৭ মৃত্যু ॥ প্রাণহানির সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৫ জন ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন আরও ৪৩৭ জন। অবশ্য আগের দিনের তুলনায় সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মঙ্গলবার ইতালিতে ৫৩৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৭০ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ জন। বেড়েছে সুস্থতার হারও। ৫৪ হাজার ৫৪৩ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর অর্ধেকই হয়েছে লোম্বার্দি অঞ্চলে। সেখানে অন্তত ১২ হাজার ৭৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মহামারির প্রকোপ কমে আসায় আগামী ৪ মে থেকে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একবারে পুরোপুরি না তুলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক ধারাবাহিকভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
×