ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মৃত বেড়ে ১২৭

দেশে আরও ৭ করোনা রোগীর মৃত্যু, আক্রান্ত ৪১৮

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০২০

দেশে আরও ৭ করোনা রোগীর মৃত্যু, আক্রান্ত ৪১৮

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। দেশে আরও ৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আক্রান্ত ৪১৮ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১২৭ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ১৮৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ১০৮ জন। নতুন করে আরও তিনটি জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। ফলে মোট আক্রান্ত জেলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮টিতে। নতুন আক্রান্ত তিনটি জেলা খুলনা বিভাগের। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের ৮৫ দশমিক ২৬ শতাংশ রাজধানী ঢাকা ও ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। মোট আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬৮ শতাংশ ও নারী ৩২ শতাংশ। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ হাজার ৯৫১ জন করোনা রোগী এবং করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে রয়েছে ৯৯৫ জন। এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯০ জনের নমুনা। মজুদ রয়েছে প্রায় ৩ লাখ পিপিই। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে নিজ বাসা থেকে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শীঘ্রই ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে এই ৮ হাজার চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন খবরের কাগজে ও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে- এ বিষয়টি সঠিক নয়। সরকার এ রকম কোন ধরনের ব্যবস্থা করেনি। সবার জন্য একই হাসপাতাল এবং একই চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন ধরনের বিবৃতি দেবেন না। যার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যা সরকারী নীতিবহির্ভূত। কোন হাসপাতাল লকডাউন হয়নি জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, কোন হাসপাতালই লকডাউন করা হয়নি এবং হবে না। অন্যান্য হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা বজায় আছে এবং থাকবে। আমাদের সকল হাসপাতালে যেসব ওষুধ সরকার দিয়ে থাকে, সেগুলো সরবরাহ এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ডাঃ নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। যখন কোথাও সংক্রমণ ঘটলে এর উৎস জানা যায় না বা আক্রান্ত ব্যক্তি কিভাবে সংক্রমিত হলেন তা বোঝা যায় না, তখন সে অবস্থাকে সামাজিক সংক্রমণ বলে। বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের তৃতীয় ধাপে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৩ হাজার ৯২১টি এবং পরীক্ষা করেছি ৩ হাজার ৪১৬টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং নমুনা পরীক্ষা ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। আমরা এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করেছি ৩৬ হাজার ৯০টি। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ জন, নারী ২ জন। মৃত্যুবরণকারী সবাই ঢাকার ভেতরে। এদের মধ্যে ৬০ বছরের উর্ধে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৪১ থেকে ৫০-এর মধ্যে একজন। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১২৩ জনকে, এখন পর্যন্ত আইসোলেশনের মোট সংখ্যা ৯৯৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩ হাজার ৪২৯ জন, এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৪৮ জন, এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৭ হাজার ৮৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ৩ হাজার ৯৭৭ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১৭ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৭৭ হাজার ৯৫৮ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬ হাজার ৩৭৫ জন। এখন পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টাইনে ৮৪ হাজার ৩৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪১৬টি ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে ৭৬টি, বিএসএমএমইউ ল্যাবে ২৮০টি, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪১টি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১২৮টি, আইসিডিডিআর’বি ল্যাবে ১৫৬ টি, আইদেশী ল্যাবে ১২৭, আইপিএইচ ল্যাবে ৬০১টি, আইইডিসিআর ল্যাবে ৫৭৯টি , ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ল্যাবে ৫৯৩টি এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজে ৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার ভেতরে ২৩৭০টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকস এ্যান্ড ইনফরমেশন ডিজিজেস ল্যাবে ১৬৫টি, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ৬৩টি, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ১৮৮টি, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ৮৯টি, রংপুরে মেডিক্যাল কলেজে ৯৪টি, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ১৩৪টি, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ২৩টি, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ৭৪টি, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে ৭৬টি, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে ৫৪টি এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৬টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এভাবে ঢাকার বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০৪৬টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ভেতরে ও বাইরে মোট পরীক্ষা করা হয় ৩৪১৬টি। প্রায় তিন লাখ পিপি মজুদ রয়েছে- স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭ হাজার ১৯০টি পিপিই এবং বিতরণ করা হয়েছে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৩টি। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩১৭টি পিপিই। করোনা সংক্রান্ত কলের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরে ৫৬ হাজার ২৬টি, ৩৩৩ নম্বরে ২৫ হাজার ২৯৭টি এবং আইইডিসিআর’র নম্বরে ৩২৬৭টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কল এসেছে ৮৪ হাজার ৫৯০টি। এ পর্যন্ত হটলাইনগুলোতে করোনা সংক্রান্ত মোট কল এসেছে ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ১২টি।
×