ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তেলের দামে ধস

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৪ এপ্রিল ২০২০

তেলের দামে ধস

জ্বালানি তেলের দাম বুঝি বর্তমানে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্তত ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম এমন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তেল উৎপাদক দেশগুলো। সোমবার তেলের দামের রেকর্ড পতন ঘটেছে। শূন্যের নিচে নেমে যাওয়ায় তেল নিয়ে সমূহ বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক শেয়ার বাজারেও। সর্বশেষ, ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম নেমে আসে মাইনাস ৩৭ দশমিক ৬৩ ডলারে। অর্থাৎ মে মাসে ক্রেতাকে প্রতি ব্যারেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ অর্থও দিতে রাজি হয়েছে উৎপাদকরা। যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত শেল অয়েল নিয়ে পড়েছে সমূহ বিপাকে। দেশটি সৌদি আরব থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তেলের দাম এত নিচে নেমে যাওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা লকডাউনজনিত কারণে চাহিদা না থাকার পাশাপাশি দায়ী করছেন সৌদি আরব-রাশিয়ার তেল মূল্যযুদ্ধ বা প্রাইস ওয়ারসহ চীনের দুরভিসন্ধিকেও। তার মানে দাঁড়ায়, এর পেছনে বৈশ্বিক অর্থনীতির পাশাপাশি কাজ করছে রাজনীতি-কূটনীতিও। চীনের উদ্দেশ্য হলো, মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের সুযোগে তেল কূটনীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপাকে ফেলা। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম প্রায় মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। রাশিয়া-সৌদি আরবের মূল্যযুদ্ধের পেছনে ছিল বেশি বেশি তেল উত্তোলন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা। তবে করোনাজনিত লকডাউনে ইতোমধ্যে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা, যা খুব শীঘ্রই সচল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ব্যবসাবাণিজ্যসহ তেল সংরক্ষণাগার আর না থাকায় এখন কেউ আর তেল উত্তোলনেও আগ্রহী হচ্ছে না। ওপেকের চেষ্টায় সৌদি আরব-রাশিয়ার মধ্যে একটি মধ্যস্থতার চেষ্টা চললেও ইতোমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে, জ্বালানি তেলের সঙ্গে বিদ্যুত-শিল্পকারখানা-খাদ্য উৎপাদনসহ প্রায় প্রতিটি পর্যায় যুক্ত এবং তা করোনার চেয়েও অনেক অনেক বেশি। বাংলাদেশ তেলের এই কম দাম থেকে লাভবান হতে পারে, যদি বিপিসি তার সামর্থ্য ও উদ্যোগ বাড়াতে পারে। তা না হলে ভয়াবহ মন্দার প্রভাব কাটানো যাবে না আগামীতে। উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর বিশ্ব এতটা খারাপ অবস্থায় আর কখনও পড়েনি। ২০২০ সাল বিশ্বের জন্য আদৌ কোন সুখবর বয়ে আনেনি। এর অবশ্য নানা যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ সম্ভবত বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিস্থিতি। অস্ট্রেলিয়া সর্বকালের ধ্বংসাত্মক দাবানলে বিপর্যস্ত। বনসম্পদসহ বিপুল শস্যহানি ঘটায় এর ছাপ পড়েছে বাংলাদেশেও। ইতোমধ্যে প্রায় সবরকম ডাল ও ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৫ ব্যর্থ হয়েছে কোন মতৈক্য ছাড়াই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে হয়েছে ব্যাপক তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ। মরুর দেশ সৌদি আরবে পর্যন্ত তুষারপাত ঘটেছে। ফলে অনিবার্য ফসল ও শস্যহানি ঘটেই চলেছে। এর বাইরেও দীর্ঘদিন থেকে চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ, ইউরোপ ও কানাডার ক্ষেত্রে ইস্পাতসহ কয়েকটি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ইস্যু, ফ্রান্সে পেনশন কর্তন নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভসহ কতিপয় ইস্যুতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গতিপ্রবাহ। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাতে অস্থিতিশীলতা এবং চরম আয়সম্পদ বৈষম্যের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা দৃশ্যমানÑ যেমন সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থাও আদৌ ভাল নয়। ফলে জনরোষ ও গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ ও পদ্ধতি বের করতে হবে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দসহ অর্থনীতিবিদদের। এর পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে করোনার প্রতিষেধক ও টিকা আবিষ্কারে। তেলের দাম নিয়েও অবিলম্বে বসতে হবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওপেককে।
×