ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের একক লড়াই

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৪ এপ্রিল ২০২০

সরকারের একক লড়াই

করোনার সর্বগ্রাসী সংক্রমণে বাংলাদেশ আজ যেন এক সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ। স্বাস্থ্য আর জীবনের ঝুঁকি প্রতিমুহূর্তে সামলানো ছাড়াও অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোও আজ এক মরণপণ লড়াই। দৃশ্যত মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় এই ভয়াবহ যুদ্ধে সরকার যেন একক দায়িত্বে সব কিছুকে সামলানোর জন্য প্রাণপাত করছে। দেশে সরকার ব্যতীত বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং বাম রাজনীতি ঘরানার অভাব নেই। কিন্তু জাতির এই চরম বিপন্ন অবস্থায় অন্য কারও যেন কিছুই করার নেই। আর বিএনপি তো বসে থাকে কোথায় সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি তা খতিয়ে দেখতে। যদিও এই দুঃসময়ে কোনভাবেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোও সুসময়ের সমস্ত ফায়দা নিয়ে তাদের ব্যবসায়িক কর্মযজ্ঞ জিইয়ে রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে নিচ্ছে। করোনায় যখন অসংখ্য দুর্গত মানুষ অনিশ্চয়তার বিপাকে ঘরে আটক, তেমন দুর্দশা সামলানোর মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসার কোন লক্ষণই এনজিওসমূহের মধ্যে স্পষ্ট হচ্ছে না। তবে ব্র্যাক এবং গণস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে আসার নজির তৈরি করেছে। করোনার সর্বগ্রাসী থাবায় পুরো অর্থনৈতিক কর্মকা- আজ ল-ভ- হওয়ার আশঙ্কায়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক অশনি সঙ্কেত দিয়েছে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দুই-তৃতীয়াংশে নেমে আসতে পারে। এই দুর্যোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বই আজ অর্থনৈতিক মন্দার অশুভ পদধ্বনি শুনছে। নিতনৈমিত্তিক চাহিদা মেটানোর যুদ্ধ তো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর এমন মরণপণ লড়াইয়ে সরকারের প্রণোদনাই একমাত্র সর্বশেষ ভরসা। সরকার অর্থনীতির প্রতিটি খাতকে অশুভ গ্রাস থেকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। পোশাক শিল্প-কারখানায় ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কৃষিনির্ভর এই শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের উৎপাদনের বৃহৎ খাতটিকেও বিশেষভাবে সহায়তা ছাড়াও সর্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোন একটিতেও বেসরকারী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিন্দুমাত্র সাহায্য-সহযোগিতার আভাস পর্যন্ত নেই। অনেক সফল ব্যবসায়ী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এমন ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে তাদেরও কোন সাড়া শব্দ নেই। সমাজের বিশিষ্টজনদের অভিমত, এনজিওসহ অন্যান্য ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকেও এই চরম দুর্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া তাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের ৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। করোনার আগ্রাসী ছোবলে তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যেতেও সময় নেবে না। কারণ ঘরে থাকার কারণে অনেক দিনমজুর তাদের কর্মহীন জীবন শুধু পারই নয়, চরম দারিদ্র্যকেও প্রতিমুহূর্তে মোকাবেলা করছে। খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো প্রতিদিনের শ্রম মজুরিতেই তাদের ভরণ-পোষণ চালায়। তারা আজ অবর্ণনীয় দুরবস্থার কঠিন আবর্তে। কর্মসংস্থানের এমন ভয়াবহতায় নিম্নবিত্তরাও আজ অসহায়। সমাজের বিত্তশালী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে এমন কঠিন সময়ে নিস্বদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত আবশ্যক। সরকার সাধ্যমতো সব কিছু করে যাচ্ছে। বাকিদেরও তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কিছুটা ঘাটতি তো পূরণ করতে হবে। তা না হলে মানবিকতার চরম অপমান আর মনুষ্যত্বের ভয়াবহ স্খলন থেকে তাদের কখনও অব্যাহতি মিলবে না।
×