ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সারাবিশ্ব ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ঝুঁকির মুখে ॥ জাতিসংঘের সতর্কবাণী

বিশ্বে মৃত্যু ১ লাখ ৮১ হাজার, আক্রান্ত ২৫ লাখ ৯২ হাজার

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ২৩ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বে মৃত্যু ১ লাখ ৮১ হাজার, আক্রান্ত ২৫ লাখ ৯২ হাজার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে ৩৬ দেশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় নতুন করে আরও ২ হাজার ৭৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারাবিশ্বে এখনও পর্যন্ত ২১০ দেশ ও অঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। মোট ২৫ লাখ ৯২ হাজার ৩৭৩ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৫ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন সাত লাখ দশ হাজার ২৭২ জন। খবর বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আলজাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স, বেলজিয়াম টাইমস, এনডিটিভি ও স্ট্রেইট টাইমসের। এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পারে। করোনা মহামারীর কারণে পর্যটন থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেমিটেন্সে ধস, ভ্রমণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে নানামাত্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অভিঘাত চলতি বছর নতুন করে আরও ১৩ কোটি মানুষকে তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বিশ্বের প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ এখনই এ তালিকায় আছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরই বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ২৬ কোটিতে পৌঁছতে পারে বলে মঙ্গলবার ডব্লিউএফপি ধারণা দিয়েছে। ডব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বিসলি জানিয়েছেন, বিপর্যয় এড়াতে জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া এখনই প্রয়োজন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া ভাষণে বিসলি বলেছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যেই বাইবেলে বর্ণিত পরিস্থিতির মতো একাধিক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারি আমরা। সত্য হচ্ছে আমাদের হাতে আর সময় নেই। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনলাইনে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন বলেছেন, সুতার ওপর ঝুলে থাকা কোটি কোটি মানুষের জন্য কোভিড-১৯ ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। যদি আমরা তা না করি, তাহলে চড়া মূল্য দিতে হবে, ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে বিশ্বকে। অনেকে প্রাণ হারাবে, অসংখ্য মানুষ জীবিকা হারাবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর গবেষণা, মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এ পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের সুরক্ষায় শীঘ্রই পদক্ষেপ না নিতে পারলে বিপদ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি কেনিয়ার খাদ্য বিক্রেতাদের উদাহরণ টানেন। বলেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপে পড়ে তারা যদি তাদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে তাদের আরও অনেক বছর লেগে যেতে পারে। আর কৃষকদের যদি লাঙল বা হালের বলদ বিক্রি করতে হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে। এই মানুষকে নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন, যারা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে মোটামুটি ঠিক থাকলেও, এখন আর নেই। যেসব দেশে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা জালে বরাদ্দ সামান্য কিংবা একেবারেই নেই সেসব দেশে বসবাসরতদের নিয়ে ‘ বেশি উদ্বেগ’। বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলে খাদ্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সে বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও আফ্রিকায় সঙ্কট তীব্রতর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনার কারণে বিশ্বের ৩৬ দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বর্তমান করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বে বেড়েই চলেছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। এ মুহূর্তে তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করছেন অন্তত ২৬ দশমিক ৫ কোটি মানুষ। দেশে দেশে লকডাউনের কারণে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। ইতোমধ্যে ১০ দেশে প্রায় ১০ লাখ লোক অনাহারে দিন কাটানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। অনেক দেশে এই মানবিক সমস্যাটার কারণে নানা ধরনের সহিংসতা, দ্বন্দ্ব ও বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে। যেভাবে সফল জার্মানি ॥ করোনা মহামারিতে সারাবিশ্ব যেখানে নাজেহাল সেখানে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে থামছেই না মৃত্যু। এ ভয়াল পরিস্থিতিতেও মহামারী মোকাবেলায় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে জার্মানি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছেন বিজ্ঞানমনস্ক এবং দূরদর্শী জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। বুধবার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৪ জন। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও সুস্থতায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে দেশটি। সেখানে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৯ হাজার ৪০০ জন। এর বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার এক শ’ জনের। বুধবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫১ জন। জার্মানিতে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় গত ২৮ জানুয়ারি। তারপরও মার্চের আগ পর্যন্ত সেখানে অনেকটা স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। লকডাউন শুরু হয় ১০ মার্চ থেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মহামারী মোকাবেলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জার্মানি দৃঢ়ভাবে এ সঙ্কট নিরসনে কাজ করছে মেরকেলের সুযোগ্য নেতৃত্বে। যুক্তরাষ্ট্রে আরও ২৭৫১ মৃত্যু ॥ মার্কিন মুল্লুকে দিনকে দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মৃত্যুর মিছিল নিয়ে হাজির হচ্ছে করোনা। মৃত্যু ও সংক্রমণ, দুই দিক থেকেই এ ভাইরাস সারাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বেড়েই চলেছে মৃতের পরিসংখ্যান। শেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশটিতে করোনায় নতুন করে আরও ২ হাজার ৭৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় মার্কিন গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় জনস হপকিন্স এ তথ্য জানায়। সর্বশেষ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সরকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৩৪৩ জনে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ১৯ হাজার ১৭৫ জনেরও বেশি মানুষের করোনা পজিটিভ এসেছে। শেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৮২ হাজার ৯৭৩ জন। ‘দোষারোপ গ্রহণযোগ্য নয়’ ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের ধরন নিয়ে এখন পর্যাপ্ত তথ্য নেই বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের কাছে। এ পরিস্থিতিতে ভাইরাসটির কৃত্রিম উৎপত্তি নিয়ে ভিত্তিহীন দোষারোপ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, উহানের ল্যাব থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে কিনা সেটি অনুসন্ধান করছে মার্কিন সরকার। এর আগে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চীনের উহানে অবস্থিত সরকার পরিচালিত একটি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে করোনাভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে। তবে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, করোনাভাইরাসটি গত বছর চীনে প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়েছে এবং এটি কোন গবেষণাগারে তৈরি করা হয়নি। প্রথমদিকে ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি গোপন করে চীন। তাই চীনের দেয়া তথ্য নিয়ে সন্দিহান অধিকাংশ দেশ। বিষয়টির সঠিক তদন্তও দাবি করছে তারা। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ১০ হাজার ॥ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন করে এক হাজার ১৬ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ১৪১। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্তদের বেশির ভাগই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দেশটিতে বসবাস করছিলেন। তারা মূলত বিদেশী কর্মীদের ডরমিটরিগুলোর বাসিন্দা। ভারতে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে ॥ ভারতে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ১১১। এর মধ্যে ৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এ ভাইরাসে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত এটি একদিনে এ ভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। গত কয়েকদিন ধরে সুস্থ হয়ে উঠা মানুষের সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বুধবার পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন। সংখ্যার হিসাবে একদিনে করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেয়েছেন মোট ৬১৮ জন। ভাইরাসটি থাবা বসিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু করে দিল্লীর বৃহৎ পাইকারি সবজির বাজার আজাদপুরেও। রাষ্ট্রপতি ভবনের শতাধিক কর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চীনে ফের ৩০ জন আক্রান্ত ॥ ফের মহামারী করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, নতুন করে আরও ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন করে কার মৃত্যু হয়নি। নতুন যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ২৩ জনই বিদেশ ফেরত। এছাড়া বাকি সাতজন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত সাতজনের করোনা সংক্রমিত হয়েছেন দেশটির একেবারে উত্তরের প্রদেশ হেলিওংজিয়াং প্রদেশে। হেলিওংজিয়াং প্রদেশটি মূলত চীনের প্রতিবেশী রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন। আক্রান্তদের মধ্যে নতুন ২৮ জন রোগী সুস্থ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। স্পেনে আরও ৪৩৫ জনের মৃত্যু ॥ নতুন করে আরও ৪৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে স্পেনে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭১৭ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ২১১ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন দ্ইু লাখ আট হাজার ৩৮৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ হাজার ৯১৫ জন। চলমান জরুরী অবস্থার সময় আগামী ৯ মে পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে পার্লামেন্টে বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি বলেছেন, এই সময়ের পর তার সরকার দেশের লকডাউন পরিস্থিতি প্রত্যাহার করে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশটির লকডাউনে শিথিলতা আনা হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাতের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। লকডাউন শিথিল হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ কর্মস্থলে ফিরেছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, লকডাউন শিথিলের কারণে স্পেনে করোনার মহামারী আবারও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
×