ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ২৪ হাজার ছাড়াল

মৃত্যুপুরী ইতালিতে আক্রান্ত হ্রাস

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২২ এপ্রিল ২০২০

মৃত্যুপুরী ইতালিতে আক্রান্ত হ্রাস

ইতালিতে করোনা মহামারী কমে আসছে। দেশটিতে এ ভাইরাস মহামারী আকার ধারনের পর সোমবার আক্রান্ত কমেছে। সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন এক লাখ ৮ হাজার ২৩৭ জন যা আগের দিনের তুলনায় ২০ জন কম। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পার্থক্য খুব সামান্য হলেও এটা খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি। ইতালির লকডাউন আগামী ৩ মে পর্যন্ত চলবে। কিন্তু এরইমধ্যে কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বইয়ের দোকান, স্টেশনারি এবং শিশুদের কাপড় বিক্রির দোকান। খবর বিবিসি ও এএফপির। তবে এর মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি কিভাবে নিরাপদে কার্যকর করা যায় তা দেখছে কর্তৃপক্ষ। স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর ইতালিতে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। রবিবার দেশটিতে সক্রিয় সংক্রমণ পাওয়া গেছে ৪৮৬টি। দেশটির বেসরকারী সুরক্ষা সংস্থার প্রধান এ্যাঙ্গেলো বোরেলি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি দেখছি: আর তা হলো আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। যাই হোক, যেসব মানুষ বাড়িতে কিংবা কেয়ার হোমে মারা যাচ্ছেন তাদের হিসাব এই সংখ্যার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। অনেকে মনে করেন যে, প্রকৃত মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসাবের তুলনায় বেশি। ইতালির কর্তৃপক্ষ বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা কমাটা ‘খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো কমেছে; এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যদিও আগের দিনের তুলনায় এদিন কম পরীক্ষা করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন এবং যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের সর্বমোট সংখ্যা ১.২ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এত কম হারে সংক্রমণ বাড়লো। তবে সোমবার দেশটিতে ৪৫৪ জন মারা গেছে যা রবিবারের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে সংক্রমণের সংখ্যায় আশার আলো দেখা গেলেও মৃতের সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নিবিড় পরিচর্যা বা আইসিইউ ব্যবহারের সংখ্যাতেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। গত এক মাসের মধ্যে সোমবার সবচেয়ে কমসংখ্যক আইসিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এখনও দুর্যোগ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইতালি। কিন্তু দেশটি সঠিক পথে রয়েছে এবং মনে হচ্ছে যে, তাদের আত্মত্যাগ ফল বয়ে আনতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা রোগী এক অঙ্কে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর দেশটির কাছে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়। রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় রোগতত্ত্ব বিভাগের এক হিসাবে বলা হয়, শনিবার রাত পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র আট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু মহামারী আকার ধারণ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন রবিবার বলেন, তার দেশে করোনা আক্রান্ত এক অঙ্কে নেমে আসার ঘটনা ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একটি মাইলফলক। এটি অন্য দেশের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বের যেসব দেশকে করোনাভাইরাস মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে তাদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া উদাহরণ হতে পারে। কারণ প্রথম দিকে চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ১০ হাজার ৬শ’ ৬১ জন করোনা রোগী ধরা পড়ে। এতে মারা গেছে মাত্র ২৩৪ জন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দেশটিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এদিকে করোনা রোগী এক অঙ্কে নেমে এলেও দেশটি সামাজিক দূরত্বের নিয়ম এখনই তুলে দিচ্ছে না। ইয়ানহোপের এক খবরে বলা হয়েছে, আগামী ৫ মে পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক দূরত্বের নিয়ম বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্রসমূহ, খেলাধুলা ও যে কোন ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং শি কুন বলেছেন, আগামী ছুটির দিনগুলোতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব না মানলে পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। করোনাভাইরাসের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও দেশটিতে সম্প্রতি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপরও দেশটি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ৭৬ দিন পর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে সম্প্রতি লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই উহান শহর থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। এরপর ২৩ জানুয়ারি শহর লকডাউন করে দেয় চীন। লকডাউন তুলে নেয়া উপলক্ষে শহরটি বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলা হয় শহরটি। সব সড়ক ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। লকডাউন প্রত্যাহারের পর থেকে প্রায় দুই শ’ ফ্লাইট ছেড়ে যায়।
×