ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২২ এপ্রিল ২০২০

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্ক্র্যাপ লোহা বা লৌহজাত পণ্য খালাস ও খাদ্য ডেলিভারিতে কোন ধরনের জটিলতা নেই। কিন্তু অন্য পণ্যের কন্টেনার ডেলিভারি স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মোট হ্যান্ডেলিংয়ের মাত্র শতকরা ২০ ভাগ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হচ্ছে। ফলে টেনশনে আছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকরা। বাকি ৮০ ভাগ টিইইউএস কন্টেনার থেকে যাচ্ছে বন্দর ইয়ার্ডে। এদিকে, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টি মনে করে বন্দর কন্টেনার ডেলিভারি না দিতে পারার পেছনে মূল কারণ চট্টগ্রাম কাস্টমস। করোনা আতঙ্কে সরকার তিন দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অভিযোগ উঠেছে, বন্দর ইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপ, লৌহজাত দ্রব্য ও সিমেন্টের ক্লিংকার ডেলিভারিতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা জটিলতা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর কন্টেনার ডেলিভারি প্রক্রিয়া সচল রাখা গেলে কেন অন্য পণ্যের কন্টেনারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। বন্দর কন্টেনার ডেলিভারি না দেয়ার কারণে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত প্রায় পাঁচ শ’ টিইইউএস কন্টেনার প্রতিদিন থেকে যাচ্ছে। ৪৯ হাজার টিইইউএস ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ বন্দর থেকে এখন প্রাইভেট আইসিডিতে কন্টেনার সংরক্ষণের কথা চিন্তা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি চলছে বলে তথ্য দিয়েছেন বন্দরের আরেক কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার রয়েছে ৪৯ হাজার ৩০৮ টিইইউএস। অথচ ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস। রবিবার মোট ডেলিভারি হয়েছে ৬১৩ টিইইউএস, মোট ৮টি জাহাজ থেকে কন্টেনার ডেলিভারি নেয়া হয়েছে। সাধারণ কার্গো জাহাজ ছিল একটি ও সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই জাহাজ ছিল ২টি। গত রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরে মোট পণ্য খালাস হয়েছে ২ হাজার ৯৭৬ টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দরে করোনাভাইরাস আতঙ্কে কন্টেনার ডেলিভারি বন্ধ প্রায়। পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সমিতি এই মুহূর্তে কন্টেনার নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে যেতে রাজি হচ্ছে না। অথচ দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হতো। আর গত রবিবারের হিসেব অনুযায়ী পোর্ট ইয়ার্ড থেকে মাত্র ৬১৩ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে। যা অন্য সময়ের খালাসের মাত্র প্রায় বিশ ভাগ। বাকি শতকরা ৮০ ভাগ পণ্য জাহাজ থেকে খালাস হলেও বন্দর ইয়ার্ডে পড়ে রয়েছে। এদিকে, আমদানিকারক ও ক্লিয়ারিং এজন্টের পক্ষ থেকে জানা গেছে, জাহাজে কন্টেনার বোঝাই করে পণ্য আসছে আনলোডিংও হচ্ছে। কিন্তু ডেলিভারি নেয়া যাচ্ছে না সরকারী বিধি নিষেধের কারণে। কারণ সরকার ঔষধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য ও কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য, শিশু খাদ্য, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, পশুখাদ্য, কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবাহী কন্টেনারগুলো ডেলিভারি দিতে পরিপত্র জারি করেছে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমস এসব পণ্যের বাহিরে কোন পণ্যের শুল্কায়ন করছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনার ডেলিভারি দিতে পারছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি মাহাবুবুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে আগ্রহী হলেও কাস্টমসের কারণে তা পারছে না। চেম্বারের কাছে ভিন্ন পণ্য ও গাড়ির পার্টস আমদানিকারকসহ প্রায় বিশটি প্রতিষ্ঠান আবেদন জানিয়েছে কাস্টমসের সহযোগিতার জন্য। এছাড়া বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখারও জায়গাও নেই। বেসরকারী আইসিডিতে কন্টেনার স্থানান্তর ও সংরক্ষণের জন্য। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালিও হচ্ছে।
×