ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুগেদারএ্যাটহোম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২২ এপ্রিল ২০২০

টুগেদারএ্যাটহোম

করোনাভাইরাস কবলিত বিশ্বকে বাঁচাতে এবার এগিয়ে এসেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পীরা। ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড টুগেদার এ্যাট হোম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লেডি গাগা, স্টিভি ওয়ান্ডার, পল ম্যাককার্টনি, বিলি আইলিশ, এলটন জন, টেইলর সুইফট, জেনিফার লোপেজসহ জনপ্রিয় ব্যান্ড রোলিং স্টোনের শিল্পীরা। মাঝে-মধ্যে এই করোনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ, মিশেল ওবামা প্রমুখ। আট ঘণ্টাব্যাপী এই জনকল্যাণমূলক অনুষ্ঠানটি রবিবার বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারিত হয় বিবিসি, এনবিসি, সিবিএস, এবিসিসহ আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। সমগ্র অনুষ্ঠানটির মূল বক্তব্য ছিল করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমগ্র মানবজাতিকে একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান এবং করোনা মহামারীর সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিনন্দন জ্ঞাপন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগ্রামের গল্পও শোনানো হয়। বিশ্ব মানব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান থেকে তাৎক্ষণিক আয় হয়েছে ১২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এই অর্থ দেয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ সলিডারিটি রেসপন্স ফান্ডে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি জানিয়েছে এটাই এক বিশ্ব #টুগেদারএ্যাটহোমের শক্তি ও প্রভাব, যা অস্বীকার করা যাবে না কোন অবস্থাতেই। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসজনিত সময়োচিত সতর্কতা জারির অবহেলার অভিযোগ এনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাম্প তার দেশের অনুদান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন, যা কিছুটা হলেও উদ্বেগজনক নিঃসঙ্গেহে। সম্প্রতি ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফাও পঞ্চাশ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবলারকে নিয়ে অনুরূপ একটি অনুষ্ঠান করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীরাও অবশ্য পিছিয়ে নেই। অনেকে আবার সরকারী প্রণোদনা দিয়ে শিল্পীদের অধিকার সুরক্ষার দাবি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। সচেতন পাঠকের নিশ্চয়ই মনে পড়বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসন ও প-িত রবিশংকরের যৌথ কনসার্টের কথা। করোনা সঙ্কটে বিশ্ব ব্যবস্থা যখন প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম, তখন এই ঐক্য ও সংহতি স্মরণযোগ্য বৈকি। এটা তো চিরসত্য যে, মৃত্যুর কাছে জীবন কখনই পরাজয় মেনে নিতে পারে না, করোনাকালেও নয়, যেটি এক অদৃশ্য শত্রু। জীবন চিরসত্য ও অপরাজিত। এখন সময় এসেছে করোনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, সময় এসেছে সম্মিলিত প্রতিরোধের। ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের। সারাবিশ্বে একদা এ দেশের চারণ কবিই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন মানবতার চিরায়ত সুমহান বিজয়বার্তাÑ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ সত্য বটে, বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব আজ বিপন্ন, করোনা কবলিত। মানব সভ্যতা রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন। সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসহ চিকিৎসা সামগ্রী নিয়েও করোনা মোকাবেলায় প্রায় ব্যর্থ হচ্ছে উন্নত দেশগুলো। ফলে অনিবার্য প্রাণ যাচ্ছে অগণিত নিরীহ সাধারণ মানুষের, নারী ও শিশুর। ঘটছে বিপুল সম্পদহানিও। মানুষের মধ্যে সুপ্ত শুভবোধ ও চেতনাকে যদি জাগ্রত করা যায়, মানবিকতা যদি বিকশিত করে তোলা যায় মানুষের মনে, তাহলে করোনা একেবারে নির্মূল না হোক, অন্তত কমে আসবে অনেকাংশে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম হাতিয়ার ও মাধ্যম হতে পারে মানুষের মেধা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি। বিশ্বের সব ধর্মই মানুষ ও মানবতার কথা বলে। সংস্কৃতি বলে মানবতার বিকাশের কথা। এই কাজটিই শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পীরা সম্মিলিতভাবে। তারা আলো দিয়ে আলো জ্বালাতে চান বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের মনে।
×