ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশার আলো ভেন্টিলেটর

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২২ এপ্রিল ২০২০

আশার আলো ভেন্টিলেটর

দুঃসময়ে আশার আলো দেখতে চায় মানুষ। শুধু সান্ত¡না নয়, চায় কার্যকর সহায়তা। গত মাসের প্রথমদিকে দেশে মাত্র একজনের কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এসে বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিদিনই নতুন রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত সোমবারে। এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রোগী বাড়ছে কিন্তু চিকিৎসার সুযোগ কতখানি বাড়ছে সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা এখনও কম। সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা আশাব্যঞ্জক। সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না। তবে কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক হয় উঠতে পারে। তাদের প্রয়োজন পড়ে অক্সিজেন সরবরাহের। অনেকের প্রয়োজন হয়ে ভেন্টিলেটরের। বাংলাদেশেও এর প্রাদুর্ভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, এমনটাও ছিল অভাবনীয়। দুর্যোগে পড়লে অনেক কিছু জানা যায়, প্রয়োজন ও বিরাজমান ব্যবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা মেলে। অতঃপর দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে ব্যাপক উন্নতি করতে হবে, সে বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট ধারণা হলো। যেখানে বিশ্বের উন্নত সব দেশ স্বাস্থ্যগত ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে, বহু কোভিড-১৯ এর রোগীকে সুচিকিৎসা দিতে পারছে না, এমন বাস্তবতায় অতি জনবহুল দেশ বাংলাদেশের পরিস্থিতি কল্পনা করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। করোনার বিদায়ের পর নিশ্চয়ই আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবে জনকল্যাণকামী বর্তমান সরকার। এই ক্রান্তিকালও আমাদের অতিক্রম করতে হবে। এক্ষেত্রে আশার আলো হয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি সর্বক্ষণিকভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। সব দিকেই তার দৃষ্টি সজাগ রয়েছে। কোথায় ঘাটতি এবং তা পূরণের জন্য কী করণীয় সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণরূপে অবগত। তবে সরকারের কাছে আলাদীনের চেরাগ থাকে না। সবকিছুই সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে যাবে, এমনটা আশা করাও অযৌক্তিক। সে কারণে বিভিন্ন বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হয়। প্রয়োজন হয় ব্যক্তিগত উদ্যোগের। আশার কথা, বাংলাদেশের মানুষ এখনও অনেক মানবিক এবং পরোপকারী স্বভাবের। নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবনের মতো মেধা ও মননের অভাবও নেই। করোনা পর্যায়কে বা এই ক্রান্তিকালকে মোকাবেলা করার জন্য সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে আছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু তাদের হাতে তো সরঞ্জাম তুলে দেয়া চাই। আইসিইউ বেড অত্যন্ত জরুরী আশঙ্কাজনক কোভিড-১৯ রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য। সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য ১২০টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। আরও একটি সুসংবাদ হলো, এখন দেশেই তৈরি হবে ভেন্টিলেটর। করোনাভাইরাস রোগীদের শ্বাসকষ্টের জন্য জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন যন্ত্রের উৎপাদন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার। ভেন্টিলেটর তৈরির এই প্রক্রিয়ায় মিনিস্টারকে সহযোগিতা করছে আইসিটি মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার টিম। ভেন্টিলেটর তৈরির পুরো প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে মিনিস্টার হাইটেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড। চলতি মাসেই প্রথম লটে ১০০ ইউনিট ভেন্টিলেটর প্রস্তুত হওয়ার সংবাদটি স্বস্তিদায়ক। পরবর্তী সপ্তাহে ৫০০ ইউনিট, এর পর পর্যায়ক্রমে ১০০০ এবং পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী এটি উৎপাদন করা হবে। এর মূল্য ৭৫-৮৫ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এই উদ্যোগের পেছনে ব্যবসায়িক কোন উদ্দেশ্য নেই, বরং তারা এই ভেন্টিলেটর সরবরাহের মাধ্যমে দেশের মানুষের সেবা করতে চান। আমাদের প্রত্যাশা, সম্মিলিতভাবে করোনাকে পরাস্ত করার জন্য সরকারসহ সব মহল যথাযথ সহায়তা দানের জন্য সদাপ্রস্তুত থাকবেন।
×