ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল ও ইন্টারনেট চালুর দাবি

প্রকাশিত: ১২:৪১, ২১ এপ্রিল ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল ও ইন্টারনেট চালুর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই জরুরী মুহূর্তে দেশের স্বার্থে রোহিঙ্গা শিবিরে নিরবচ্ছিন মোবাইল এবং ইন্টারনেট চালুসহ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য দানকারী সংস্থা এবং রোহিঙ্গা নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে এটি সময়ের দাবি। সোমবার দেশের বিশিষ্ট শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, লেখক, গবেষক, আইনজীবী, সামাজিক আন্দোলনকমীসহ ২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান। দেশের খ্যাতনামা গবেষক ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রিদোয়ানুল হক, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুলøাহ চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ড. মঞ্জুর হাসান, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরসহ অন্যরা এই বিবৃতি দেন। তারা বলেন, উখিয়া এবং টেকনাফ অঞ্চলে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ না থাকায়, মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না এবং যারা এদের সংস্পর্শে কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে এবং প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এই বিধিনিষেধের ফলে, স্থানীয় জনগণের মাঝে করোনাভাইরাস উপসর্গগুলো বিদ্যমান থাকলেও তাদের পণ্ড আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী (বিশেষ করে নারী, বয়োবৃদ্ধ), চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ জনস্বাস্থ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, মানবাধিকার এবং মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত সরকারী এবং বেসরকারী কর্মীবৃন্দ এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবন বাঁচাতে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণটির প্রকোপ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী, সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য এবং হালনাগাদ নির্দেশিকা দ্রæত ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট পৌঁছে দেবে এবং তা একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করতেও সহায়তা করবে। বিবৃতিতে তারা বলেছেন- রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য বিশ্বস্ত এবং আস্থার জায়গা না থাকার ফলে বিভিন্ন প্রকার গুজবের ওপর নির্ভর করছেন। শিকার হচ্ছেন স্থানীয়দের বিদ্বেষমূলক আচরণের। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সংক্রমণে আক্রান্ত হবার আগেই আমরা সরকারকে শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং সহায়তা কর্মীদের মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আশপাশে চলমান মোবাইল ইন্টারনেট বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাই। মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রবাহ ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস মহামারী থেকে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ এবং সহায়তা কর্মীদের সুরক্ষা এবং কল্যাণে কাজ করবে বলে তাদের ধারণা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১১৬ জন মানুষ বসবাস করে। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। কোনভাবে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে তা মারাত্মক গতিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা জানি, সরকার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এখনও শিবিরগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা, বিশুদ্ধ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার অভাব রয়েছে। যদি রোহিঙ্গা শিবির অঞ্চলে করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীন প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তারা করোনা মহামারীকালে গণহত্যাসহ নৃশংস অপরাধসমূহের শিকার প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের নৌ-সীমানা থেকে উদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশের জনগণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারসমূহ এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানান।
×