ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির ২৯ জন

পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনা আক্রান্ত, কোয়ারেন্টাইনে ৬শ’

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ এপ্রিল ২০২০

পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনা আক্রান্ত, কোয়ারেন্টাইনে ৬শ’

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ সারাদেশে পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সংক্রমক ঠেকাতে চিকিৎসকদের পরই পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু লাঠি হাতেই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনও কখনও পলায়নকৃত করোনা রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণ বিতরণসহ নানা কাজে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এসব করতে গিয়েই পুলিশ সদস্যরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ২৯ জন। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক ও বিভিন্ন ইউনিটে নিয়োজিত উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, করোনা রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছে থাকা বা সংস্পর্শে থাকতে হয় চিকিৎসকদের। তারপরই স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ। পুলিশের সুরক্ষার বিষয়ে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা যায়নি। আবার দায়িত্ব পালনের সময় ‘অসাবধানতাবশত’ সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেও অনেক পুলিশ সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন। এতে ঝুঁকিও বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী। পুলিশ সদর দফতরের করোনা সেলের প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ তথ্যমতে, পুলিশের আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ২৯ জন ডিএমপিতে, এর মধ্যে সিভিল স্টাফ রয়েছেন। ঢাকা রেঞ্জ অফিসে একজন আক্রান্ত হয়েছেন, পুলিশের টিএ্যান্ডআইএমে একজন, সিএমপিতে দুজন। গাজীপুর মহানগর পুলিশে চারজন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) দুজন, ময়মনসিংহে একজন, নৌ পুলিশে একজন, এ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে একজন, নারায়ণগঞ্জে ৫ জন আক্রান্ত দুজন। গাজীপুর, নরসিংদী ও শেরপুরে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের করোনা সেলের সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জে ১১ জন। কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬২৬ জন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১৪৩ জন আছেন। আইসোলেশনে ৯ জন। জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দুই থানার সব পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ কর্মকর্তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। গুলশান উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে এক সাধারণ কর্মচারী আক্রান্ত হলে ছয় কর্মকর্তা কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) দুই সদস্য আক্রান্তের পর তাদের পাশে থাকা সদস্যদেরও আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস ব্যারাকে একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যারাকে থাকা ২০০ পুলিশ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঢাকা থেকে যাওয়া এক পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, করোনা ক্রান্তিকালে চিকিৎসকের পর সম্মুখযুদ্ধে আছেন পুলিশ। অনেক পুলিশ সদস্যই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। ব্যারাক ও জেলাগুলোর পুলিশ লাইনসে বসবাস করা প্রত্যেকটি সদস্যের সুরক্ষায় যা যা করণীয় ও গৃহীত উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কোন সদস্য যেন আক্রান্ত না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আইসোলেটেড করা, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রত্যেকটি ইউনিট প্রধানকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ পুলিশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা খুব খারাপ ম্যাসেজ যাবে সর্বমহলে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে করোনার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। কোন কারণে যদি আরও উন্নত চিকিৎসা কিংবা অবজারভেশনের দরকার হয় বা কোন কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে পুলিশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে করোনার যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল রয়েছে সেখানে পাঠানো হচ্ছে। আর পুলিশ ব্যারাকগুলোর প্রতিটা ফ্লোর বা যেখানে যেখানে করোনার জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করা হচ্ছে। যারা ডিউটিতে যাচ্ছেন তাদের আলাদাভাবে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম ও মাস্ক, পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তারা নিজেরা যেন আগে বিধিগুলো মেনে চলেন, সেজন্য নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে। পুলিশ কমিশনার জানান, আমরা আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করেছি।
×