ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিপিই ও মাস্কের মান নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ এপ্রিল ২০২০

পিপিই ও মাস্কের মান নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরবরাহ করা পিপিই ও মাস্কের মান যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাক্স ও পিপিই’র বক্সতো ঠিক আছে, কিন্তু বক্সের ভেতরের জিনিসগুলো ঠিক আছে কিনা নজরদারিটা একটু বাড়ানো দরকার বা যিনি রিসিভ করবেন উনি যেন দেখে-শুনে রিসিভ করেন।’ এ বিষয়ে বেশকিছু অভিযোগ তাঁর কাছে আসার ইঙ্গিতও দেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে সাধারণ মাস্ক দেয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশ দেন। রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভুল মাক্স সরবরাহের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে, পিপিই না দিচ্ছে বেশ ভাল, কিন্তু জিনিসগুলো বোধহয় ঠিকমতো যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিত। বক্সে এন-৯৫ লেখা, কিন্তু ভিতরের যে জিনিসটা সেটা সঠিক থাকে কি না, এটা একটু দেখা দরকার আপনাদের।’ ভিডিও কনফারেন্সের একেবারে শেষভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার-সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদুল্লাহ। এ সময় স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকও পাশে বসা ছিলেন। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার-সিএমএসডি পরিচালক পিপিই-মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর মজুদ ও বিতরণের তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটা প্রশ্ন এসেছে। আমি মন্ত্রীর (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি- যারা সাপ্লাই দেয় তারা সঠিকভাবে সঠিক জিনিসটা দিচ্ছে কি না? মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে, পিপিই নাম দিচ্ছে বেশ ভাল কিন্তু জিনিসগুলো বোধহয় ঠিক মতো যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিত। আপনারা দিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু যারা সাপ্লাইয়াররা ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা বা সঠিক জিনিস কিনছে কি না, এটা একটু দেখা দরকার। আর কেউ যদি এ রকম কিছু করে থাকে বা এই সাপ্লাইয়ার কে? আমি শুধু বললাম যে মহানগর হাসপাতালে এটা গেছে। এ রকম যদি কিছু কিছু জায়গায় হয় সেটাতো ঠিক না। যাদের ব্যবসাটা দেন বা যারা নেয় বা যারা সাপ্লাই দেয়- তারা সঠিকটা দিল কিনা অবশ্যই তা দেখতে হবে। এ সময় করোনা চিকিৎসার কাজের জন্য পিপিইসহ নির্ধারিত সুরক্ষা সামগ্রীর অপব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেগুলো সম্পূর্ণভাবে রোগী দেখার জন্য, সেগুলো রোগী দেখার জন্যই থাকবে এবং ওই হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট যারা, তাদেরকেই ব্যবহার করতে হবে। বাকি সবাই সুরক্ষিত থাকবার জন্য যা ব্যবহার করা হয় যেমন মাক্স, হ্যান্ড গ্লাভস বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সেগুলো সকলে মিলে ব্যবহার করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক, নার্স যারা রোগী দেখবেন, তাদের যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা দরকার, সেগুলো যদি সবাই মিলে যত্রতত্র ব্যবহার করতে শুরু করে, তাহলে আমরা ডাক্তার-নার্সদের দেব কীভাবে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪০টি পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৯টি বিতরণও করা হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলায় রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু জেলায় এটা এখনও ছড়াতে পারেনি। তাদের আমরা বলব, তারা যেন নিজেরাও সেই ব্যবস্থা নেন যে, বাইরে থেকে কেউ যেন না যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার-সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লাহ জানান, হয়তো জরুরী প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে, এখন আমরা চাচ্ছি আমাদের এই ভুলগুলো যেন না হয়, সেটা সঠিকভাবে বিতরণ যেন নিশ্চিত করতে পারি, সে উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। তিনি জানান, রবিবার পর্যন্ত পিপিই গ্রহণ ছিল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪০টি। বিতরণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ১১৯টি। মজুদ আছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯০১টি। পিপিইগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এবং বাকি ৩০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা। মাস্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এন-৯৫ মাস্ক সহজলভ্য না। এর সমমান বা কাছাকাছি কেএন-৯৫ বা পি-২। এগুলো সম্পূর্ণই হচ্ছে বৈদেশিক আমদানি নির্ভর। ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ কেএন-৯৫ ও এফএফপি-২ মজুদ এসেছে। এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। কিটের মজুদও যথেষ্ট আছে বলে জানান শহীদুল্লাহ। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরী। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমেও আসে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে চিঠি দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে ব্যাখ্যা দেন। সেখানে বলা হয়েছে- ‘সিএমএসডি কোন দেশীয় চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নিকট এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করে নাই। বাংলাদেশী চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জেএমএআই কোভিড-৯৫ সংক্রমণের পূর্বে থেকে হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার, সাধারণ মাস্ক ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স/কোয়ালিটি সার্টিফিকেট/ছাড়পত্র অনুযায়ী সিএমএসডিকে সরবরাহ করে আসছে। উক্ত কোম্পানি যে মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে, সে মোড়কগুলোতে এন-৯৫ মুদ্রিত ছিল। সিএমএসডি ভুলক্রমে সাধারণ মাস্ক হিসেবেই পণ্যগুলো সরবরাহ করে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়েই নজরে আসে এবং সিএমএসডি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহকারী কোম্পানিকে মাস্কগুলো ফেরত দেয়। কেন এমন মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে তার লিখিত জবাব চায়।’
×