ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিনরাত কাজ করছে প্রশাসন ॥ বাড়ানো হয়েছে পরীক্ষা ও সেবা

করোনা প্রতিরোধে সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ এপ্রিল ২০২০

করোনা প্রতিরোধে সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা

নিখিল মানখিন ॥ করোনা নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বিরামহীন। সর্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আরও সচেতন হয়ে সরকারী উদ্যোগগুলোতে সহযোগিতা করলে করোনার করাল গ্রাস থেকে এখনও দেশকে রক্ষা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টি, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি, চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা, দেশব্যাপী ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিন দফা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি। লকডাউন করা হয়েছে একের পর এক বাসাবাড়ি এলাকা ও জেলা। বাসায় অবস্থান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কার্যক্রম সফল করতে ঘোষণা করা হয়েছে নানা দ-নীয় সরকারী আদেশ। ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহীত সকল উদ্যোগ বাস্তবায়নে জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, দলীয় নেতাকর্মী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ ঘরে অবস্থান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলেই সফলতার মুখ দেখবে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। করোনার মহামারী থেকে রেহাই পাবে দেশবাসী। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তা-ব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠলেও এখন ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ৪০ হাজার । মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এপ্রিলের প্রথম থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৫৬ জন। মারা গেছেন ৯১ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি একটি বৈশি^ক মহামারী। এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিশে^র উন্নত দেশগুলো অসহায় হয়ে পড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আতঙ্কমুক্ত থাকতে পারে না। দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর করোনা প্রতিরোধে গ্রহণ করতে থাকে একের পর এক কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ । কিন্তু সরকার সামাজিক দূরত্ব তৈরির উদ্দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। ছুটি পেয়ে মানুষ দল বেঁধে ঢাকা ছেড়েছে। ফেরিঘাট, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের ভিড় গণজমায়েতের চেহারা পেয়েছিল। ঢাকা শহরে গাড়ি চলতে শুরু করেছে, অলিগলিতে মানুষের ভিড়। দেশের কোথাও কোথাও হাটবাজারে জনসমাগম হচ্ছে। ত্রাণ বা খাদ্যসহায়তা নিতেও মানুষ ভিড় করছে। এসব সংক্রমণ প্রতিরোধের অন্তরায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করাটাও কঠিন হয়ে পড়ছে, যা করোনা সংক্রমণের উর্বর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি ॥ করোনা প্রতিরোধে এর আগে চলতি মাসের পহেলা মার্চ একটি জাতীয়সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও কমিটি গঠন করে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের জাতীয় কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সরকারী- বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউনিসেফ এবং ইউএস এইডের প্রতিনিধি রয়েছেন। জাতীয় কমিটি দেশের অভ্যন্তরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার বিষয়ে পরামর্শদান। স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিসমূহকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া হবে। করোনা প্রতিরোধে বিভাগীয় কমিটি গঠন ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধসহ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে জাতীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটির পর গত ১৮ মার্চ বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে কমিটিতে বিভাগীয় শহরের জেলা প্রশাসকসহ ১২ সদস্য রয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে কোন তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ জাতীয় কমিটির পরামর্শ প্রহণ করবে এই কমিটি। বিভাগীয় কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। এছাড়াও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইনসহ আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সারাদেশে প্রস্তুত রয়েছে সাড়ে সাত হাজার আইসোলেশন বেডÑ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৬৯৩ আইসোলেশন শয্যা ও ১১২টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে আইসোলেশন বেডের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫০টি। ঢাকা মহানগরীর বাইরে দেশের বিভিন জেলা-উপজেলার হাসপাতালে ৬ হাজার ১৪৩টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশে সর্বমোট আইসোলেশন বেডের সংখ্যা সাত হাজার ৬৯৩টি। এছাড়া আইসিইউ শয্যা সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১১২ এবং ডায়ালাইসিস বেডের সংখ্যা ৪০টি। আইসিইউ শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৫৫০টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে ৭৯টি। ঢাকা মহানগরীর বাইরে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৬৯৭ আইসোলেশন বেড, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৩০টি ও ২৬টি আইসিইউ শয্যা, বরিশালে ৫৪৫ আইসোলেশন শয্যা, সিলেটে ৩৪৬টি আইসোলেশন ও দুটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। রাজশাহীতে ১২শ’ আইসোলেশন শয্যা থাকলেও আইসিইউ শয্যা নেই। সেখানে আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। খুলনায় রয়েছে ৬৯০টি আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউ বেড সংখ্যা ৫, রংপুরে আইসোলেশন শয্যা সংখ্যা ৭৮৭টি। বিভাগীয় পর্যায়ে আইসোলেশন শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ১৪৩ এবং আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৩টি। তবে বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায় ও জেলা শহরে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা হাসপাতাল তৈরি এবং চিকিৎসক -নার্সদের থাকার ব্যবস্থা ॥ রাজধানীর ছয়টি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবাদানকারী চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্য সদস্যদের অবস্থান কিংবা কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাজধানীর ১৯টি আবাসিক হোটেল বরাদ্দের চুক্তির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিষয়টি জানিয়ে অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মোঃ আমিনুল হাসান স্বাস্থ্য সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন। ছয়টি হাসপাতালের সেবাদানকারীদের জন্য নির্ধারিত হোটেলগুলো হচ্ছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের জন্য ঢাকা রিজেন্সি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জন্য হোটেল অবকাশ, হোটেল জাকারিয়া, হোটেল রেনেসাঁ, ঢাকা রিজেন্সি, রেডিসন ব্লু, সোনারগাঁও, লেকভিউ, লা মেরিডিয়ান। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের জন্য উত্তরার হোটেল মেলোলিফ, হোটেল মিলিনা। মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রান্ড প্রিন্স, হোটেল শ্যামলী, হোটেল ড্রিমল্যান্ড। মহানগর জেনারেল হাসপাতালের জন্য রাজমনি ঈশা খাঁ, ফারস হোটেল ও হোটেল’৭১। রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের জন্য হোটেল সাগরিকা, হোটেল গ্র্যান্ড সারকেল ইন এবং হোটেল শালিমারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সংখ্যা ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানায়, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার সময় দেশের একটি মাত্র ল্যাবরেটরিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হতো। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ধাপে ধাপে ল্যাবের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ১৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এপ্রিলের শেষ দিকে এই সংখ্যা ২৮টিতে দাঁড়াবে। বিদ্যমান ল্যাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকার ভেতরে আইইডিসিআর, আইপিএইচ , আইসিডিডিআরবি , চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইদেশী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন , আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ, বিএসএমএমইউ। আর ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকস এ্যান্ড ইনফরমেশন ডিজিজেস, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ। প্রায় চার লাখ পিপি মজুদ রয়েছে Ñ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান , এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৬টি পিপিই এবং বিতরণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৪ট। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩২টি পিপিই। হটলাইনে ২৭ লাখের বেশি মানুষকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ প্রদান ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) মোঃ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, সারাদেশ থেকে প্রতিদিন হটলাইনগুলোতে শত শত মানুষ চিকিৎসা পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছেন। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২৭ লাখ ২২ হাজার ৪১০ জনকে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৬২৬৩ নম্বরে (স্বাস্থ্য বাতায়ন) ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ১০২ জন, ৩৩৩ নম্বরে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৩ জন এবং আইইডিসিআরর নম্বরে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৫ জন চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিয়েছেন। বিদেশফেরত প্রায় লাখ মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চীনে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বিমান, স্থল ও সমুদ্র বন্দরসমুহ এবং ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে আসা প্রত্যেক বিদেশফেরত মানুষকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯৫১ জন, স্থলবন্দরসমূহে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪০৫ জন, সমুদ্রবন্দরসমূহে ১৪ হাজার ১২ জন এবং ক্যান্টনমন্ট রেলওয়ে স্টেশনে ৭ হাজার ১৭ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এভাবে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত স্ক্রিনিংকৃত মোট যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৭ জনে। চিকিৎসক, নার্সদের জন্য প্রণোদনা ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এবার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিতদের জন্য বিশেষ বীমার ব্যবস্থা করার কথাও জানান তিনি। যদি কোন চিকিৎসক, নার্স অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে পদবী অনুযায়ী তাদের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা করা হবে। এছাড়া সেবা দিতে গিয়ে যদি কেউ মারা যান (আল্লাহ না করুক), তাহলে তাকে ৫ গুণ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। যারা করোনার সময় কাজ করছেন, জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, এই প্রণোদনা তাদের জন্য। ব্যাংকারদের জন্য প্রণোদনা ॥ করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী সশরীরে অফিস করছেন তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, ১০ দিন অফিসে গেলেই ব্যাংক কর্মীরা ভাতা হিসেবে পাবেন বাড়তি এক মাসের বেতন। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন ব্যাংকিং খাতকে সচল রাখতে যারা তাদের জীবন ও পরিবারকে ঝুঁকিতে রেখেও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। গার্মেন্টস সেক্টরে প্রণোদনা ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত অর্থনৈতিক সঙ্কট সামলাতে বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টসসহ রফতানি খাতের জন্য প্রণোদনা হিসেবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিতরণের এক রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। তবে শর্ত হলো, এ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। মালিকরা এই টাকা পাবেন দুই শতাংশ হারের সুদে ঋণ হিসাবে। সরকারী নির্দেশনাই করোনা প্রতিরোধের রক্ষাকবচ ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে করোনার থাবায় জর্জরিত ইউরোপের দেশগুলো থেকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে মাঠে সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত করোনা প্রতিরোধ কমিটি এবং জনপ্রতিনিধিরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রতি মুহূর্ত মনিটরিং করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী নির্দেশনাসমূহের সঙ্গে জনসাধারণের আন্তরিক অংশগ্রহণের মিলন ঘটলেই করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম সফল হবে।
×