ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভিক্ষ হবে না-

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২১ এপ্রিল ২০২০

দুর্ভিক্ষ হবে না-

শনিবারের একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন ছিল ব্যতিক্রমী তবে তাৎপর্যপূর্ণ। এই সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় মাত্র দেড় ঘণ্টার জন্য বসে এই সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। দেশ এবং একই সঙ্গে সমগ্র বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের মতো এক মহাসঙ্কটকাল অতিক্রম করছে তখন সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ যথাযথ নিরাপত্তা মেনেই শুরু ও সমাপ্ত হয় এই অধিবেশন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিদের সবাই ছিলেন মুখে মাস্ক পরিহিত এবং কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য সদস্যদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে অতিরিক্ত উপস্থিতির কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। সম্প্রতি অনলাইন ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ রকম অধিবেশনে বসেছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্যরা এবং আইএমএফের নীতিনির্ধারকরা। স্বীকার করতে হবে যে, দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেরও এ রকম একটি জরুরী ও বিশেষ অধিবেশন অপরিহার্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে যা বলেছেন তা ছিল সুচিন্তিত, দূরদর্র্শী ও দিকনির্দেশনামূলক। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে আগামীতে কোন দুর্ভিক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেউ না খেয়ে থাকবে না। মনে রাখতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রী এই কথাটি ঠিক তখনই বলেছেন যখন বিশ্ব খাদ্য সংস্থা রীতিমতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আগামীত বিশ্বকে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পাল্লা দিতে হবে সময়ের সঙ্গে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আফ্রিকাসহ স্বল্পোন্নত বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মুখে পড়তে পারে বিশ্বের অন্তত ছয় কোটি শিশু। বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ বাণিজ্য ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই বিবেচনায় বলতেই হবে যে, বাংলাদেশ এসব দিক থেকে তুলনামূলক ভাল অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। গত কয়েক বছর ধরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চলতি বোরো মৌসুমের ফলনও ভাল। সুবিস্তৃত হাওড় অঞ্চল, আড়িয়াল ও চলন বিলে বোরোর উৎপাদন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সেই অনুপাতে ধান কাটার লোক নেই। অনেকেই লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রধানমন্ত্রী তাদের ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ সহায়তা করতে বলেছেন। ছাত্রদেরও ধান কাটার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী আউশ মৌসুমের জন্য কৃষকদের সহায়তা প্রদানে বিনামূল্যে বীজ সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। যার সুফল পাবেন কৃষক থেকে শুরু করে খামারি ও পোল্ট্রি খাত, ফুল-ফল চাষীসহ সংশ্লিষ্টরা। খাদ্য মজুদ আরও বাড়ানোর জন্য এবার ধান ক্রয়ের সীমাও বাড়ানো হয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনার। এর বাইরেও নেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, যার সুফল পাবেন ধনী-গরিব-ক্ষদ্র ব্যবসায়ী-কুটিরশিল্পসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই। পোশাক ও চামড়া খাতের জন্য ঘোষিত হয়েছে বিশেষ প্যাকেজ। সর্বোপরি বাড়ানো হয়েছে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ছাড়াও সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এই চাল বিতরণের জন্য বর্তমানের ৫০ লাখ ওএমএসের কার্ডের অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ কার্ড দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি কার্ড থেকে সুবিধা পাবে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এ ছাড়া প্রতি জেলা পর্যায়ে নগদ ৫০ কোটি টাকা ও ৯০ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে দুস্থ এবং গরিবদের জন্য খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে, যাতে কেউ সাহায্য চাইলে সঙ্গে সঙ্গে যেন খাবার পৌঁছে দেয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা, চলতি মহামারী কবলিত দুর্যোগ পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে তিন বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা। সরকারের এই স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন অবশ্যই।
×