ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরাইলের ঘটনায় ঝুঁকি আরও বাড়ল, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২০ এপ্রিল ২০২০

 সরাইলের ঘটনায় ঝুঁকি  আরও বাড়ল, তিন   সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ জেলার সরাইলে লকডাউনের মধ্যেই মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় হাজারও মানুষের জমায়েত নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় সরাইল থানার দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ এএসপি (সার্কেল) প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের আদেশে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যাহৃতরা হলেন- সরাইল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মাসুদ রানা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন টিটু এবং ওসি (তদন্ত) নূরুল হক। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, শনিবারের ঘটনা তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, একসঙ্গে হাজারও মানুষের জমায়েত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ গ্রামকে লকডাউন করা হয়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। আগামী ১৪ দিন তারা হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকবে। লকডাউনে থাকা বাসিন্দাদের দাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা তারা জানেননি। রবিবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যাত্রীরা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ, মাধবপুর, ভৈরব ও নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেয়। এছাড়া ১১ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলেও রবিবার শহরে যানবাহন এবং জনসাধারণের চলাচল অনেকটাই বেড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার জানান, লকডাউন চলাকালে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের খাদ্য সহায়তা দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। গণজমায়েতের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান করোনা ঝুঁকি আরও বাড়ল! ॥ করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ১১ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনা হলেও গত ১৮ এপ্রিল মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় উপজেলার বেড়তলা জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা মাঠে মানুষের ঢল নামে। এক পর্যায়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জন স্রোত ছড়িয়ে পড়ে। যাতে সামাজিক দূরুত্ব ছিল অনুপস্থিত। এ নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ শুরু হয়। এ অবস্থায় সর্বত্র উৎকণ্ঠা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে এ সংবাদ প্রচার করে। আকস্মিক এই গণজমায়েতে হতভম্ব চিকিৎসরাও। জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ রবিবার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ ঘটনার পর জেলাবাসী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল! ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর জন্য ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল। তাই ৮ গ্রামের বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও এ জন্য প্রচার চালানো হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের উক্ত গ্রামগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি কোন বাসিন্দার জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। এদিকে, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সরাইলের বেড়তলা গ্রামের ৩৩ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান প্রদান করেন সরাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এম,এ মুসা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি গ্রামের মেম্বারদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যতীত কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন। প্রয়োজনীয় কেনাকাটর জন্য জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাই কেনা কাটার ব্যবস্থা করে দেবে তবে তাদের বিল পরিশোধ করতে হবে।
×