ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্যোতিকা জ্যোতির ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড়

প্রণোদনা দিয়ে শিল্পীদের অধিকার সুরক্ষার দাবি

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২০ এপ্রিল ২০২০

প্রণোদনা দিয়ে শিল্পীদের অধিকার সুরক্ষার দাবি

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি সম্প্রতি ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টে বর্তমান করোনা দুর্যোগকালে সরকারীভাবে প্রণোদনা দিয়ে অসহায় শিল্পীদের বাঁচাতে এবং তাদের অধিকার সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন। তার পোস্ট সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বমহামারীতে রূপ নেয়া নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোধে বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় কার্যত লকডাউন চলছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। জীবনযাত্রা সবকিছুই যেন স্থবির। সেইসঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন কর্মকান্ড। বৈশ্বিক মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিল্পকলা একাডেমি, মহিলা সমিতি মঞ্চে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী হচ্ছে না, টিভি নাটক, চলচ্চিত্রের শূটিং বন্ধ এক মাসের ওপর। শিল্পী-কুশলীরা সবাই নিরাপত্তার স্বার্থে হোম কোয়ারেন্টাইনে বন্দী। সংস্কৃতি অঙ্গনের পেশাদার কর্মী, নির্মাতা, চিত্রগ্রাহক ও অভিনয়শিল্পীদের অনেকের জীবনেই এখন দুর্দিন চলছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক মাস ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে চলচ্চিত্র শিল্পেরও সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১৫ চলচ্চিত্র মুক্তি না পাওয়ায় এবং দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারী প্রণোদনা না পেলে চলচ্চিত্র শিল্প আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হলিউড-বলিউডসহ এতদিন ঢাকাতেও মূল ভাবনা ছিল নাটক-চলচ্চিত্র-সঙ্গীতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বিভিন্ন টেকনিশিয়ান বা সহকারীদের নিয়ে। তাদের সাহায্যে এগিয়ে গেছে বিভিন্ন তারকা ও সংগঠন। তবে পেশাদার শিল্পীদের জন্য কোন প্রণোদনা কিংবা বন্ধ হওয়া আয়ের বিপরীতে কোন উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। সময় যত পেরিয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর পক্ষে দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তাদের এই আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চিয়তা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকেই। কর্মহীন হয়ে পড়া মঞ্চনাট্যকর্মীদের জন্য কেউ কেউ কথা বলছেন। গোপনে হয়তো কেউ নিজের কাছের কাউকে সহযোগিতা করছেনও। তবে বেশিরভাগ শিল্পী অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। এরমধ্যে অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতির একটি মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে দেয়া ফেসবুকে জ্যোতি বলেন, করোনায় কারও করুণা চাই না, চাই শিল্পীর সম্মান ও অধিকার। জ্যোতির মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। অসংখ্য টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি তার ফেসবুকে মন্তব্য করেন ‘বলছিলাম যে, বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী এবং সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কর্মীদের কী অবস্থা? প্রণোদনা জাতীয় কিছু নেই? ক্ষুধার উন্মাদনাও নেই ? কাউকে তো কিছু চাইতেও দেখছি না। ইশারা ইঙ্গিতে দু’একজন বলার চেষ্টা করলেও ঐ যাকে বলে হালকার ওপর ঝাঁপসা। পাছে কে কী মনে করল! তাহলে তো মানসম্মান গেল বলে! অবশ্য আমাদের দেশে এই পেশার লোকদের আদৌ কেউ সম্মান করে কিনা সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান! কাজ নেই, অনাহারে দিন কাটছে যাত্রাশিল্পীদের ॥ প্রাণঘাতী করোনার হিংস্র ছোবলে বিপন্ন বিপর্যস্ত যাত্রাশিল্পও। করোনার আঘাতে প্রায় দুই মাস ধরে দেশে যাত্রা প্রদর্শনী বন্ধ। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন বহু যাত্রাশিল্পী। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দরিদ্র শিল্পীরা । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার ডেমরা, সারুলিয়া, মানিকগঞ্জের আরিচা, মহাদেবপুর, গোপালগঞ্জের সাতপার, যশোরের মনিরামপুর, খুলনার বটিয়াঘাটা প্রভৃতি অঞ্চলের অসংখ্য যাত্রাশিল্পীর ভাগ্যে দুই বেলা ঠিকমতো খাবার জুটছে না। অনেকে স্ত্রী-পুত্র পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন ধারণ করছেন। বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এমনিতে কয়েক বছর ধরে যাত্রার দিনকাল ভাল যাচ্ছিল না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টালবাহানার কারণে প্রায় যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি ব্যাহত হতো মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে। যাও কিছু ছিটে ফোঁটা অনুষ্ঠান চলছিল, হঠাৎ করোনার থাবায় সব তছনছ হয়ে যায়।
×